MrJazsohanisharma

সত্য বাক্যের সন্ধানে

 


কোন মানুষ যদি চরম মিথ্যাবাদী হয় অথবা খারাপ চরিত্রের হয় আর সে যদি কোন নতুন মতবাদ ব্যাক্ত করেন তাহলে যা ইচ্ছা তাই বানাতে পারেন।নিজের সুবিধার জন্য এবং সমাজের নেতাদেরকে মন জয় করার জন্য এমন এমন কথা বানাতে পারেন যাতে সবাই তাকে নিয়ে আনন্দে বিমোহিত হয়ে যায়।নিজের অসৎ স্বার্থের জন্য এমন কিছু করবে না যাতে তার ক্ষতি হয়।

হযরত মোহাম্মদ (সা) উনার চাচা আবু তালেবকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ স্বীকার করতে বলেছিলেন মৃত্যুশয্যায়।বার বার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন যে চাচা আপনি একবারের জন্য হলেই এই বাক্য স্বীকার করে নেন।আমার চাচা! আপনি ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ কথাটি বলুন। এর দ্বারাই আমি আল্লাহর কাছে আপনার জন্য সাক্ষ্য দেব।

তখন আবূ জাহল ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ উমাইয়্যাহ্‌ বলে ওঠলো, হে আবূ তালিব! তুমি কি ‘আবদুল মুত্তালিবের মিল্লাত দীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে? অর্থাৎ সে দ্বীন পরিত্যাগ করবে? এদিকে রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বার বার তাঁর কথাটি পেশ করতে থাকলেন।

আবূ তালিব শেষ পর্যন্ত যে কথা বললেন তা হলো, তিনি ‘আবদুল মুত্তালিবের মিল্লাতের উপরই অবিচল থাকবেন এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি “লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ” বলতে অস্বীকৃতি জানালেন।

এতে রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর শপথ! যতক্ষণ আমাকে নিষেধ না করা হয় আমি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবো।

এ প্রসঙ্গে সুমহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করলেন, “নবী এবং ঈমানদারদের পক্ষে মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা শোভা পায় না, যদিও তারা মুশরিকরা নিকটাত্মীয় হয়। কেননা তারা যে জাহান্নামী হবে এটা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে”- সূরাহ আত্‌ তাওবাহ্‌ ৯ :১১৩।

আবূ তালিবের প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা রসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বললেন, “হে নবী! নিশ্চয়ই হিদায়াত আপনার হাতে নয় যে, যাকে আপনি চাইবেন হিদায়াত করতে পারবেন। বরং আল্লাহ যাকে চান তাকে হিদায়াত দান করেন, আর কে হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে তিনিই বেশি জানেন”-সূরাহ আল কাসাস ২৮:৫৬।

গভীর দৃষ্টির সাথে খেয়াল করুন হযরত মোহাম্মদ (সা) উনার চাচাকে নিয়ে এতো কষ্ট করতে গেলেন কেন? বিদ্বেষীদের দাবী অনুপাতে যদি উনি মিথ্যাবাদী নবী হবেনই তাহলে এটা কেন বললেন না যে আমার চাচা এমনিতেই জান্নাতে যাবেন? এটা করা কি উনার জন্য খুব কঠিন ছিল? হযরত মোহাম্মদ (সা) কি নিজেকে ছোট করলেন না যে আপনি চাইলেই কাউকে হেদায়েত করতে পারবেন না,এই কথা বলে? 

খেয়াল করুন উনি যদি খারাপ বা মিথ্যুক হতেন তাহলে কিন্তু কস্মিনকালেও এই কথা উনি বলতে পারতেন না।যেখানে সমাজের বড় বড় কাফেররা উপস্থিত সেখানে সবার সামনে নিজেকে এটা বলা কি অপমানের নয় যে আপনি চাইলেই কাউকে হেদায়েত করতে পারবেন না?

উনি বলতেই পারতেন যে আমার চাচাকে আল্লাহ ইমান না আনা সত্ত্বেও এমনেই জান্নাত দিয়ে দিবেন? অবাক করার মতো বিষয়, উনি এমন কিছুই বলেন নাই? এর থেকে কি প্রমান হয় না যে সে আসলেই একজন সত্যিবাদী নবী ছিলেন? যে নিজের দায়িত্বে ছিলেন অটল তা নিজের প্রিয় চাচার বিরুদ্ধে গেলেও?

যারা ইতিহাস পড়েছেন তারা জানেন, উনার চাচা হযরত মোহাম্মদ (সা)কে অনেক বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন।এমনকি কাফেররা যখন উনাকে অত্যাচার করবার প্রয়াস চালানোর পরিকল্পনা করবে এমন মুহূর্তেও উনার চাচার জন্য কাফেররা সফল হয়নি।এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রিয় চাচাকে কেন হযরত মোহাম্মদ (সা) জাহান্নামের ফয়সালা শুনিয়ে দিবেন? কোন স্বার্থে? উনি তো উনার চাচাকে অনেক ভালবাসতেন। ব্যক্তিগত আক্রোশ বা মনোমালিন্যতা এমন কিছুই হরযত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং উনার চাচার মধ্যে ছিল না বরং পিতা-সন্তান এমন সুন্দর সম্পর্কই উনাদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল।

এমনকি উনার চাচা মারা যাবার পরে উনি আরবের নেক্সট নেতা হয়ে যেতেন,হয়ে যেতেন সম্পদশালী যদি না নবী দাবী করতেন।নিজেকে নবী দাবী করার আগে কাফেররা সবাই উনাকে খুব মান্য গণ্য করতো উপাধি দিয়েছিল আলামিন হিসেবে। এতো এতো বিশাল অফার কেন বা কোন স্বার্থে উনি ছেড়ে দিলেন?

হযরত মোহাম্মদ (সা) উনার চাচার সব সম্পত্তি এমনিতেই পেয়ে যেতেন যদি নিজেকে নবী দাবী না করতেন তাহলে সম্পদের লোভ যদি উনার মধ্যে থাকতই তাহলে চাচাকে এটলিস্ট কোন ভাবে জান্নাতি বানিয়ে দিতেন, সেই সম্পদ হাতিয়ে নিতেন অথচ এমন কিছুই উনি করেন নাই। কেন?

এটাই বা কেন বললেন আমাকে নিষেধ না করার অবধি আমি চাচার জন্য মাফ চাইতেই থাকব? একজন মিথ্যাবাদী মানুষ এমনটি করতে পারে? বিবেক কি বলে? সুস্থ চিন্তা কি বলে? যুক্তি কি বলে? প্রমান কি বলে?

উনার আশে পাশে সেলেব্রিটি কাফেররা ছিল যাদেরকে খুশি করতে পারলেই গোরজিয়াস সব কিছু হাসিল করা সম্ভব হয়ে যেত তাও উনি করেন নাই। কেন? উনি তো চাইলেই এমন কথা বানাতে পারতেন যে কাফেররা সব এমনেই জান্নাতে যাবে,ইমান আনতে হবে না। কিন্তু উনি তা করেন নাই। কেন? 

বিদ্বেষী নামক চশমাটা খুলে ফেলে চিন্তা করুন না? ভাবুন না? প্রমান কি পাচ্ছেন না? সত্য কি কাছে পেয়েও দেখছেন না? আর কতো নিজেকে ধোকা দিবেন? আর কতো নিজের বিবেকের সাথে প্রতারণার খেলা খেলবেন? বিনয়ের সাথে চিন্তা করুন? এই সাধারণ ছোট একটা বিষয় কি আমাদের ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে পারে না? কেমন প্রমান পেলে আর আমরা অনুধাবন করতে পারবো?

========================

সত্য বাক্যের সন্ধানে / এমডি আলী

========================

👉রেফারেন্সঃ

* সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ৩৯,সহিহ হাদিস,ihadis.com

Post a Comment

Previous Post Next Post