সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই আমি একগ্লাস পানি খাই। ডাক্তাররা বলেন এই অভ্যাস শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম এর জন্য নাকি খুবই উপকারী। যাই হোক। একটা প্রশ্ন কিছুদিন মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। মহাবিশ্ব এমনে এমনেই কেন সৃষ্টি হলো?
ফেসবুকের এক নাস্তিক ফ্রেন্ডকে জিজ্ঞাসা করলাম।সে আমাকে বললো মুমিনদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করবি আল্লাহ কেন মহাবিশ্ব বানাইলো? আমি বললাম মুমিনরা কুরআনের আয়াত দেখিয়ে বলবে আল্লাহ তার ইবাদতের জন্য আমাদেরকে বানাইসে তো সেই হিসেবে এই মহাবিশ্বও বানাইসে। সে আমাকে আবার বললো তখন আবার প্রশ্ন করবি কুরআন আল্লাহর বানী তার প্রমান কি?
আমি তখন আমার সেই বন্ধুকে বললাম এভাবে তো আমার মনে যেই মুল প্রশ্ন সেটাই হারিয়ে যাবে। আমি কি করবো? প্রচুর মাথায় পেইন করছিল আমি আর ওকে নক না দিয়ে ফেসবুক লগ আউট করে দিলাম।
উফফো এমন আগে লাগেনি! কি আজিব। আমার মনে একটা হতাশা কাজ করছিল। আমি ফেসবুকে যেই নাস্তিকদেরকেই এই প্রশ্নটা করি ওরা আমাকে ইসলাম নিয়ে পাল্টা জিজ্ঞাসা করতে বলে যা একটা পর্যায়ে আমার কাছে বিরক্ত লাগতো। আমি নাস্তিকতার ভিত্তিতে এই প্রশ্নের যৌক্তিক একটা জবাব পেলে আমার মনে প্রশান্তি আসতো। কিন্তু হায় কে দিবে আমাকে এর উত্তর।
আমার চাচার একটা বিশাল রুম আছে। সেখানে তিনি প্রচুর মোটা মোটা বই রাখতেন। প্রচুর বই পড়ুয়া একজন মানুষ ছিলেন। আমার দাদির কাছে শুনেছিলাম চাচা নাকি তার জীবনের একটা সময় নাস্তিক ছিল পরে কি এক কারনে তিনি নাকি পাক্কা মুসলিম হয়ে যান।
রুমে ডুকেই ঝাপসা লাগলো, মনে হলো পুরাতন কোন এক যামানায় চলে আসছি। আমি বই খুজতেছিলাম আর ভাবতেসিলাম যদি আমার প্রশ্নের জবাব পাই! বই খুজতেছিলাম হঠাৎ বাবা আমাকে ডাক দিলেন। পরে আর বই দেখা হয়নি কিন্তু মনের মাঝে আমাকে পুরে খাচ্ছিল সেই প্রশ্নটি।
ভাবলাম ভার্সিটির নাস্তিক বন্ধুদেরকেই সরাসরি জিজ্ঞাসা করবো। এক ফ্রেন্ডকে ক্যান্টিনে জিজ্ঞাসা করলাম আচ্ছা দোস্ত মহাবিশ্ব এমনি এমনিই কেন সৃষ্টি হলোরে? সে আমাকে বিগব্যাং, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন আরও পদার্থ বিজ্ঞানের সুত্রের কথা শোনাচ্ছে।
আমি ওকে বল্লাম এসব কারনেই যদি মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে তো আমরা বলতে পারি না যে মহাবিশ্ব শূন্য থেকে সৃষ্টি হয়েছে। "এমনি এমনি কেন হলো"এটার কারন দেখাতে তুই যেই কথাই আমাকে বলিস না কেন সেটা তো এমনি এমনির সাথে সাংঘর্ষিক হবে। কারন যখনই তুই আমাকে একটা কারন দেখাবি তারমানে সেই কারনের উপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে আমাদের মহাবিশ্ব। আর কারনের প্রতি নির্ভরশীল হলে এমনি এমনি কিভাবে সৃষ্টি হলো?
আচ্ছা দোস্ত আমি এখন যাই হে। পরে কথা বলবো নি। আমি আমার নাস্তিক বন্ধুদের জবাবে আসলে শান্তি পাচ্ছিলাম না। মনটা খারাপ লাগছিল।
ভাবলাম ফেসবুকে এই প্রশ্নটা নিয়ে পোস্ট করি। ওমা একি অবস্থা! আমার নাস্তিক বন্ধুরা কমেন্টে লিখছে তুই কি মুসলিম হয়ে গেলি নাকি? অনেকে প্রশ্নটার জবাব না দিয়ে হাসি ঠাট্টা করছে আর মুসলমানদের নিয়ে ট্রল করছে। বিষয় গুলো দেখে আমার ভিতরে একটা চাপ অনুভুত হলো। আমি পোস্টটি মুছে দিতে বাধ্য হলাম।
জীবনে অনেক ছলছাতুরি করেছি। মুসলিমদের নিয়ে কত ট্রল করেছি। যেসব মুসলিমরা গবেষনা করতো,প্রচুর পড়াশোনা করতো তাদের ধারের কাছেও যেতাম না কারন তাদের সাথে কথা বলে যুক্তি দিয়ে পারতাম না আর ইসলাম নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা করলে সাথে সাথে তারা আমার ভুল ধরে ফেলতে পারতো। ইসলাম নিয়ে যাদের বিন্দুমাত্র জ্ঞান নেই তাদেরকেই আমরা টার্গেট করতাম আর হারিয়ে দিয়ে মজা লুটতাম আর ফেসবুকে পোস্ট দিতাম মুমিনরা কিসু পারেনা।
এসব ভাবছিলাম আর নিজেকে জানি কেমন লাগছিল।আজ থেকে কয়েক মাস আগে এক মুমিনের সাথে তর্ক করছিলাম সে আমাকে এই একই প্রশ্নটা জিজ্ঞাসা করলে তাকে আমিও পুরোনো স্বভাবে পাল্টা প্রশ্ন করি সে বিভিন্ন যৌক্তিক দিক থেকে উত্তরে বলেছিল মহাবিশ্ব সৃষ্টি নামক জিনিসটাকে স্রস্টাই বানিয়েছেন। এখন দেখছি এ কথাটা ভদ্র, ভাল, সভ্য, মার্জিত আর সুন্দর শোনাচ্ছে!
💐💐💐
👉 এসবের উত্তর কে দিবে আমায়?
✍ লিখেছেনঃ এম ডি আলী।