স্রস্টা থেকে নেয়া


 

লেকের পাড়ে বসে ছিলাম আমি। সামনে ছোট পুকুর, চারদিকেই বাতাসের মৃধু ছোঁয়া যে কাউকেই মন মাতিয়ে দিবে!

জানা নেই, শোনা নেই হঠাত একটা লোক আমাকে ডাক দিল, এই যে ভাই শুনছেন! এই যে ভাই! আমি বললাম কি হয়েছে ভাই? সে বলল আমি আপনার এই পাশের বেঞ্চে বসতে পারি? আমি বল্লাম  হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই!

অপরিচিত মানুষ, তাই আমি উঠে চলে যেতে লাগলাম সে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো আপনার কাছে আমার কিছু প্রশ্ন ছিল। আমার কাছে? কি বলেন?

আচ্ছা আপনারা তো মুমিন, তো স্রস্টা আমাদেরকে কেন ধর্ম বা জীবন বিধান দিবেন? কারন মানুষ তো অতি নগন্য। আপনারা হয়তো বলতে পারেন মানুষের বুদ্ধি বেশি কিন্তু মানুষ থেকেও অনেক বুদ্ধিমান প্রানীর উদাহরণ দেয়া যায়। যেমন বানর,পিপরা এদেরকে বুদ্ধিমান প্রানী বলাই যায়। এরপরে আপনার হাতি, বাঘ এগুলা শক্তিশালী প্রানী এদের তুলনায় মানুষ কিছুই না।

লোকটি আরও কিছু বলতো এরিমধ্যে আমার এক সিনিয়র ভাই। উনি বিজ্ঞানের ছাত্র। বিজ্ঞানকে ভালবাসেন। রবিউল ইসলাম রুবেল নাম উনার। ইসলামকে খুবই ভাবাসেন। সকাল বেলা ফজরের নামাজ শেষ যে কেউই চাইলে তার বাড়ির সামনে দাঁড়াতে পারেন কুরআনের মধুমাখা পাঠ আপনার কানে এমনেই এসে যাবে।

ভাই বললেন কিরে এখানে তুই! কি করছিস? আমি বল্লাম এই তো তেমন কিছুই না। পাশে বসে থাকা লোকটিকে দেখিয়ে বললাম উনি আমাকে প্রশ্ন করেছে। এই এই এই প্রশ্ন করেছে।

তুই কি এর জবাব পারিস না?

পারি কিন্তু তুমি জবাব দেও ভাইয়া। তুমি আমার থেকে ভাল গবেষণা করো। ভাই ভাইয়ে এমন মানবিক ভালবাসা দেখে সেই লোকটি বলে ফেলল বাহ বাহ এরকম মায়া এই যুগে কই পাওয়া যায় গো?

আচ্ছা ভাই আপনার প্রশ্নের জবাব আমি দেই কেমন।

জি আচ্ছা!

আপনি যেই যুক্তি পেশ করেছেন মহাবিশ্বের তুলনায় আমরা অতি নগন্য তাই স্রস্টা আমাদেরকে কোনো ধর্ম বা জীবন বিধান দিতে পারে না। আপনার এ যুক্তিটি অতি দুর্বল কেননা নগন্য হওয়ার কারনেই যে স্রস্টা আমাদেরকে জীবন বিধান দেন নাই এটা আপনি কিসের ভিত্তিতে জানতে পারলেন?

এটা কোনো কথা হলো, আমার বুদ্ধি দিয়ে জেনেছি।

আপনার যুক্তি অনুপাতে স্রস্টা যদি আমাদেরকে ধর্ম না দেয় তাহলে তিনি আমাদেরকে বুদ্ধি কেন দিলেন কারন আমরা তো অতি নগন্য? এটার কি জবাব দিবেন। আমরা অতি নগন্য হওয়ার পরেও তিনি আমাদেরকে যেখানে বুদ্ধি বিবেক দান করেছেন সেখানে আমাদের জীবন চলার পথ দিবেন না এটা চিন্তা করাটাই ভুল।

দেখুন রবিউল ভাই। আমরা মানুষ, আমাদের মাথায় চুল আছে। এখানে হাজার হাজার চুল পরে আবার তৈরি হয় আমরা কিন্তু এসব ছোট বিষয় পাত্তা দেই না। আবার আমাদের পায়ের নিচে অনেক বালুকণা আছে আমরা গুরুত্ব দেই না আবার ছোট পোকামাকড় আছে যারা আমাদের অনিচ্ছা সত্বেও পায়ের চাপা খেয়ে ইন্তেকাল করে। ঠিক তদ্রুপ স্রস্টাও আমাদেরকে নগন্য বলেই জীবন বিধান দেন নাই। এখন কেন দেন নাই সেটা তিনি জানেন।

ক্রিংক্রিং ক্রিংক্রিং। আসসালামুআলাইকুম ভাই। আমি রবিউল বলছি। আপনি?..........

আচ্ছা ভাই আমার একটা জরুরি কাজ আসছে। আপনার যেই টাইপের প্রশ্ন এসবের জবাব আমার এই ছোট ভাইটিই পেশ করতে পারবে। আমার লাগবে না।

ভাইয়া তুমি কই যাও?

তুই উত্তর দে! আমার আর্জেন্ট কাজ আছে। না হলে উনার যদি বেশি দরকার হয় তাহলে আমার ফোন নাম্বার উনি নিয়ে পরে আমার সাথে আলচনা করতে পারে।

আচ্ছা ভাইয়া। না! থাক! আমিই উনাকে উনার দুর্বল প্রশ্নেরই এবং যুক্তির উত্তর দিচ্ছি।

তো ভাই আপনার কি এইটাই প্রশ্ন? জি ভাই।

আপনার দুর্বল যুক্তির দুর্বল পয়েন্ট হলো। মনোযোগ দিয়ে শুনুন। চুল বালুকণা এসব মানুষ বানায় নাই সেহেতু মানুষ এসবে গুরুত্ব দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আর পিপড়া বা পোকামাকড় এগুলাও মানুষ বানায় নাই। কিন্তু হ্যাঁ! যদি মানুষ এসব বানাইতো তাহলে অবশ্যই এসবকে গুরুত্ব দিতো। পোকামাকড়,চুল বালুর যেই কথা বললেন সেটা খুবই নিন্ম মানের অযৌক্তিক কথা। মানুষ এসব ছোট বিষয়কে গুরুত্ব দেয় না এরমানে এটা নয় যে স্রস্টা মানুষকে নগন্য ভেবে জীবন বিধান দিবেন না। স্রস্টা মানুষকে ধর্ম দেন নাই এই কথা আপনি কিসের মাধ্যমে নিশ্চিত হলেন এটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। স্রস্টা আমাদেরকে জীবন বিধান দিয়েছেন সেটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি নবী-রাসূলগণ মাধ্যমে। এখন মহানবী (সা) আল্লাহর রাসুল কিনা সেটা নিয়ে আলাদা কথা আপনার সাথে বলাই যায়। মানুষ নগন্য  জিনিসকে পাত্তা দেয় না এই যুক্তি ভুল। কেননা ছোট একটা সোনার আংটিও মানুষ অনেক গুরুত্ব দেয়,শব্দ খাতায় লেখা থাকে সেটা মানুষের  তুলনার অনেক ছোট তারপরেও সেটা মানুষ গুরুত্ব দেয় কারন আমাদের জ্ঞান অর্জনে সহায়।

আমার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা। স্রস্টা যদি নগন্য ভেবে আমাদেরকে জীবন বিধান নাইই দেন তাহলে আমাদেরকে তিনি নগন্য ভেবে বুদ্ধি,চিন্তা করার ক্ষমতা, এনার্জি, সত্য জানার চেষ্টা এমনকি নৈতিকতা এসবও দেন নাই। যদি তিনি মানুষ নগন্য হওয়ার সত্বেও এসব দেন তাহলে ধর্মও অবশ্যই দিয়েছেন। সন্দেহ নাই।
এখন হিন্দু, খ্রিস্টান বৌদ্ধ ও ইসলাম কোন জীবন বিধান সত্য সেটা নিয়ে আলাদা আলোচনা করাই যায় আপনার সাথে কি বলেন? আপনার মতো মানুষ যারা বলে বানর, পিপড়ার মানুষের থেকে বুদ্ধিমান তারা আমার যুক্তি বুঝতে সময় লাগতে পারে! বানর পিপরা এরা লেংটা থাকে তাদের এই নৈতিকতা আপনি মানবেন?

চারদিকে আজানের শব্দ। আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার,,,,,,,,,,,

আচ্ছা ভাই আমি মসজিদে যাবো। আপনার প্রয়োজন হলে অন্য কোন দিন আমার সাথে আলচনা করতে পারেন আর সত্য জীবন বিধান উপলব্ধি করতে পারলে চলুন না! মসজিদে যাই!

👉 স্রস্টা থেকে নেয়া / এম ডি আলী।


Post a Comment

Previous Post Next Post