গল্পের নাম:ব্লকলিষ্ট
সাদেক ইদানিং আমাকে মোটেও সময় দেয় না। দূরে আছে
তাতে কি, তাই বলে কি ভালোবাসা কমে যাবে? কোন কবি যেন
বলেছেন, "দূরত্ব যত বেশি ভালোবাসাও তত গভীর"। আমার
কবির নাম মনে নাই, পাঁচ মিনিট যাবত গুগল তন্নতন্ন করে খুঁজলুম তাও
পেলুম না। যাক্ একজন তো লিখেছেই।
,
যারা ফ্রিলেন্সার তারা জানে কত ব্যস্ত থাকে এরা। ডাক্তারের পর
ব্যস্ত জাতি হিসেবে আছে এনারা। কাজের চাপ কম থাকে যখন
হয় ট্যুরে যাওয়া পড়ে বা কোন এক্সাম থাকে। তখন মন ভরে
একটু কথা বলতে পারি। শেষবার কি এক্সাম দিয়ে এসে বললো,
জারার আম্মু, একাউন্ট টা তো কয়দিন অফ রাখলাম পরীক্ষার জন্য
এখন কাজ টাজ নাই, একটু দোয়া করো যাতে কয়টা কাজ পাই।
,
পতিভক্তি নারী বলে কথা। স্বামীর অসহায় সময়ে আমি পাশে না
দাড়ালে হবে? যদি না দাড়াই ছকিনা, জরিনা দাড়ানোর তো অভাব নাই।
তাই নামাজে বসে স্বামীর জন্য দোয়া করলাম, হে আল্লা তুমি
তাকে এমন কাজ দিও যাতে ওয়াশরুমেও যাওয়ার সময় না পায়।
,
কয়দিন না যেতেই সাদেকের পরিবর্তন লক্ষনীয় হল। সে
দিনের সকাল বেলা মেসেজ দেয় না, দুপুরবেলা কল দেয় না।
শুধু ইফতারের আগে মেসেজ দিয়ে জিজ্ঞেস করবে,
বসছো?
কই বসার কথা বলে, কিসে বসতে বলে, কেন বলেছে তা লিখা
নাই। যাক্, আমিও ধরে নিলাম ইফতারে বসার কথাই বলেছে। ওমা
তারপর লাপাত্তা।
,
জিজ্ঞেস করলাম তোমার কাহিনী কি? সাদেক বললো আর
বলোনা, কাজের চাপ এত বেড়ে গিয়েছে। তুমি তো পারো
না, পারলে একটু হেল্প হতো।
,
এমন দোয়া কবুল হবে চিন্তার বাইরে। দোয়া নিয়ে কিছুই বলিনি
ওকে।
,
আমাকে বললো, একটু ল্যাপটপ টা নিয়ে বসলেও তো পারো।
আমি বললাম তা পারি কিন্তু বসি না, ইচ্ছে করেই। ও বললো, কেন?
আমি বললাম শেষ বার কত কষ্ট করে একটা লোগো বানিয়ে
তোমাকে দেখিয়েছি। আর তুমি জাস্ট নাইস বলেছো, এটা
দেখে জিদ ওঠে গেছে। তাই আজ দেড় মাস ল্যাপটপ এর
সামনে বসি না। আরেকটু ভালো কমেন্ট আশা করেছি, একটু
উৎসাহ আশা করেছি, হলো, সেগুড়ে বালি।
,
আমার কথা শুনে সাদেক কতক্ষণ নিরব ছিলো। যা ভাবলাম তাই।
আমার ওপর কিছুক্ষণ কথার সাইক্লোন বয়ে গেলো।
,
তবুও আমি এখন হতাশ। সে আমাকে সময় দেয় না, আমারো সময়
কাটে না। কি করা যায় ভাবছি। অবশেষে উপায় মিললো।
,
আমি টুকটাক ফেসবুকে লিখালিখি করি সেই সুবাদে ভালোই
লোকজনের সাথে পরিচয়। কেউ তো বিশ্বাসই করতে চায় না,
আমার যে মহিষের মতো একটা স্বামী আছে, বাচ্চা আছে।
সবাই বলে, আরে আপ্পি আপনি তো পুরো সিঙ্গেলদের
আবেগ নিয়ে লিখেন, কেউ তো বলে আমি নাকি সদ্য
প্রেমে পড়া যৌবনে ভরা এক যুবতি।
,
মনে মনে ভাবি তোরা আমাকে দেখলে ওই জায়গায় মৃগী
রোগীর তাফরাতে তাফরাতে অজ্ঞান হয়ে যাবি। বাটা জুতা
শুকিয়েও জ্ঞান ফেরানো সম্ভব হবে না। তবে তাদের এত
প্রশংসার দাবিদার আমার হাত আর কলম। মনে মনে খুশি হই আর তার
রিপ্লাই দিই, যাহ্ দুষ্ট কি যে বলো না?
,
তো যা ভাবা তাই কাজ। রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস এ ম্যারেজ দেয়া
ছিলো এখন সিঙ্গেল করে দিয়েছি। আমার সময় এখন কোন
দিক দিয়ে চলে যায় নিজেও জানি না।
,
ভক্তদের ম্যাসেজ এর রিপ্লাই দিতে দিতে সাদেকের কথা
ভুলেই গিয়েছি।
,
আজ একজন বলে আপ্পি ইউ আর সো কিউট। বললাম কি করে
বুঝলেন? উনি বলে আপনার লেখা পড়ে। বললাম আজকাল লিখা
পড়েও চেহারা অনুমান করা যায়? বাহ, জানতাম না তো।
,
আরেকজন বলে আপ্পি, প্রেমে ছ্যাকা খেয়েছি একটা কবিতা
রচনা করে দিবেন প্লিজ? কি আর করা ভক্তের অনুরোধ কি
ফেলা যায়? কবিতার নাম দিলাম "ছ্যাঁকার চোটে বিড়ি ফুকে"। আহা
ভক্তের ধন্যবাদের মেসেজ এর জ্বালায় দুই মিনিট ডাটা অফ
করে রেখেছি।
,
আরেক ভক্ত অনুরোধ করলো, আপ্পি নতুন প্রেমে
পড়েছি। গার্লফ্রেন্ডকে একটা কবিতা উপহার দিতে চাই। প্লিজ
আপ্পি প্লিজ একটু হেল্প করেন। নতুন প্রেম। ও তার ওপর
জিএফ আবার নিব্বি। বোঝাই যায় আবেগে ভরপুর।
তাকে লিখা কবিতার নাম "তোমার আমার প্রেম ওগো, শাহজাহান
মমতাজের মতো"। কবিতা শুনে নাকি নিব্বি জিএফ আবেগেই
কেঁদেই দিয়েছে। বাসায় নাকি ডিক্লারও দিয়ে দিয়েছে বিয়ে যদি
করতেই হয় এই ছেলেকে করবে। এমন কথা শুনে মা দিলো
মাইর আর আপাতত বিছানায় কাতরাচ্ছে।
,
গল্প প্রেমিরা তার প্রেম কাহিনী শোনায়, আর শেষে বলে
আপ্পি আমার জীবন নিয়ে একটা গল্প লিখেন আর অবশ্যই
আমাকে নায়ক/ নায়িকা দিবেন। নামটা মনে রাখবেন প্লিজ।
,
এখন ভক্তদের আবদার রেখে সে অনুযায়ী লিখালিখি করতে
করতে কখন যে সময় চলে যায় টেরও পাই না।
,
হঠাৎ সাদেকের মেসেজের কথা মনে পড়লো। বিশ জন
পরে তার আইডি পেলাম আর শত শত মেসেজ। দুই একটা
দেখেই আর মেসেজ আনরিড করে রেখেছি। যাতে বুঝে
আমি মেসেজ দেখি নাই। ওর মেসেজের রিপ্লাই দেয়ার মত
সময় আপাতত আমার নাই, আর বুঝুক মেসেজ দিয়ে রিপ্লাই না পাবার
কষ্ট কি।
,
ইতিমধ্যে লেখা পড়ে আমার প্রেমে পড়া প্রেমিকদের তো
অভাব নাই। প্রেমিক সম্প্রদায়কে এক পাশে চেপে রেখে
আমি ভক্ত সম্প্রদায় নিয়ে আপাতত ব্যস্ত। প্রেমিক সম্প্রদায়
হলো লগু, আর লগুকে কখনো পশ্রয় দিতে নাই।
,
হেয়াট্স অ্যাপে গেলাম এখানেও শত শত মেসেজ। কল
লিস্টে দেখি ৭০ টা কল। সব সাদেকের।
,
আমি কল দিতেই রিসিভ করলো মনে হয় ফোন হাত থেকে
নামায় নাই।
,
আমাকে বললো, তোমার সমস্যা কি মেসেজ দেখো না?
আর ফেসবুকে দেখলাম তোমার ফ্যান ফলোয়ার বেড়েছে,
কমেন্টেসে তোমাকে কি সব লিখার রিকুয়েস্ট করছে,
কাহিনী কি?
,
আমি বললাম, তুমি আমাকে সময় দাও না তাই সিঙ্গেল স্ট্যাটাস দিলাম।
আর তাতেই আমার সময় কাটানোর পথ খুলে গেলো। আর
খবরদার বকা ঝকা করবা না নইলে ব্লক খাবা।
,
এটা শুনে সাদেক কল কেটে দিলো। আধা ঘণ্টা পর ফেসবুকে
যেয়ে যা দেখলাম, বিশ্বাস করেন তার জন্য আমি মোটেও
প্রস্তুত ছিলাম না।
,
সব কমেন্ট এর রিপ্লাই সাদেক দিয়েছে, আমার বউ আর কোন
লিখালিখি করবে না, আমার বউ শুধু আমাকে নিয়ে লিখবে, আমি
আমার বউয়ের জামাই, সে বিবাহিত, জারা আমাদের ভালোবাসার
সন্তান, আর কেউ যদি আমার বউকে কিছু লিখতে বলে তার
আইডিতে রিপোর্ট মারবো ইত্যাদি ইত্যাদি।
,
ম্যাসেন্জারে গিয়ে দেখি আমি ভক্তদের ব্লকলিষ্টে।
,
এখন সাদেকও আমার ব্লকলিষ্টে।