বিবাহের প্রথম রাতে স্ত্রীকে রান্নারঘরে দেখে বেশ অবাক হয়েছিলাম।তার চাইতে আরো দ্বিগুন আবাকহয়েছিলাম সেই রাতেই। বিবাহেরপূর্বে কতশত কথা জমা রেখছিলাম নিজের মনে। কিন্তু আমাকে এতটা অবাক করা কাজ যে সে করতে পারবে, তা হয়ত কখনোই কল্পনাই করিনি।
.
এক
রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়েছিলাম আমি। স্ত্রী আমাকে দেখা মাত্র’ ইসালাম দিলেন। সালামের জবাবের
পরপর’ই স্ত্রী আমার সামনে এসেই বললেন তাকে সালাম দিতে। আমি তাই করলাম। পরবর্তীতে জানতে
পারলাম সালাম দেয়া যেমন দ্বীগুন সাওয়াব ঠিক তেমনি তার উওর দেয়াও সাওয়াবের বিষয়। আমার
স্ত্রী বললেন,কেয়ামত খুব সন্নিকটে তাই আমি এবং আপনি থুব বেশি বেশি নিত্য দিন-রাত বেশি সালাম দিব, ভাল কাজ করব, আমল করব, সাওয়াব অর্জন করব।’ বিয়ের পূর্বে অল্প হলেও একটু হয় কথা বলতাম। কিন্তু তিনি (স্ত্রী)পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন যে,‘বিনা প্রয়োজনে একটা কথাও যেন না বলি।’ রান্না ঘরে এইসব কথা শুনে মাথা থেকে অল্প একটু যে কথাগুলো ছিল তা আর মনে পড়ছেনা। স্ত্রী আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘আমাকে রান্নার কাজে অল্প একটুসাহায্য করুন। এতে করে আপনি সাওয়াব পাবেন।’আমি নিজ মাথায় হাত দিতে দিতে বলেছিলাম,‘তাই বলে আজকেই এসব শুরু?’স্ত্রী এবার আমার হাতে একটি গ্লাসদিয়ে বললেন,
‘মৃত্যুর কোনো নিশ্চয়তা নেই। ত কাল থেকে নয়, বরং এখন থেকেই সাওয়াব অর্জন করতে হবে।’আমি গ্লাসটা হতে নিয়ে চেয়ারটায় বসার সাথে সাথেই বললেন,পুরু খাবেন না। অর্ধেক খাবেন ।বাকিটা আমার জন্য ।’
আমি একটু হেসে বললাম,আচ্ছা ঠিক আছে।’তারপর রান্নার কাজে অল্প একটু সাহায্য করলাম।
-
দুই
ফজরের সালাতের পর বাসায় চলেআসলাম। স্ত্রী আমাকে সালাম দিয়েকিছু বলার পূর্বে সালামের উওরটা
দিয়েই তাকে সালাম দিলাম।টুপিটাবিচানায় রেখে বসলাম। স্ত্রী টুপিটাহাতে নিয়ে মাথায় পড়িয়ে দিলেন।
আমি স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে একটাওকথা বলতে পারিনি। কারন তাকেপর্দার কথা থেকে শুরু করে নিজ
(আমার) পিতা-মাতার খেদমতেরকথাও আমাকে বলতে হয়নি। সেইআমাকে বলেছিলেন,‘শ্বশুর-শ্বাশুরির সেবা যত্ন করলেসাওয়াবের সাথে আপনার সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভ করতে পারব।’অবাক না হবার কোনো কারন’ ই
দেখতে পারছিনা। বিবাহের তেমন দিন বা ঘন্টা পার হয়নি। তবুও তাকে খুব চেনা চেনা লাগছে।তার প্রতিটা কথা যেমন আল্লাহকে মনে করিয়ে দেয়, ঠিক তেমনি প্রতিটা কথার বদলে সম্মানের দিকটা খুব বেশিই বৃদ্ধি পাচ্ছে। টুপিটা মাথায় পড়িয়ে নরম সুরে বললেন,‘আপনি কোরআন তেলাওয়াত না করে চলে আসলেন।’
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে একটা অপরাধির মত নিচের দিকে চেয়ে রইলাম। অথচ স্ত্রী আমার কপালে
চুমো দিয়ে টুপিটা খুলে বললেন, ‘আপনি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে কোরআন তেলাওয়াত
শুনবেন।’আমার মুথে হাঁসি চলে এলো।আমি স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললাম,‘কোরআন তেলাওয়াত করলে ত
সাওয়াব হবে ও শুনলেও সাওয়াব হবে।’ঘন্টা খানেক তেলাওয়াত শুনলাম ও উপভোগ করলাম।কারন গভীর
ভাবে কোরআন তেলাওয়াতে এক অন্যরকম আভা মেলে মনের মাঝে ও তা উপভোগ করা যায়।
-
তিন
নয়টার দিকে দোকানে যেতে হবে। তাই তৈরি হয়ে বাবা-মার কাছেথেকে বিদায় নিতে ও কিছু লাগবে কিনা তা জিগ্যাস করতে তাদের রুমে গেলাম। বাবা-মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে রান্না ঘরের দিকে গেলাম। চিনি, চা পাতা থেকে শুরু করে সবকিছু ভাল ভাবে দেখা হয়ে গেল। আমার পুরনো দিনের একটা অভ্যাস হল বাবা-মা কিছু বলবার পূর্বেই তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসটা আমি বাজার থেকে নিয়ে আসি । কারন বাবা-মায়ের পছন্দ-অপছন্দ সব জিনিস আমার কিছুটা হলে’ ই এ ব্যাপারটা স্ত্রী বাবা-মার থেকে জানার পর অনেক’টা খুশি
হয়েছিলেন।স্ত্রীর কিছু লাগবে কিনা তা জিগ্যাস করতে তেমন কিছু’ই বলেননি।তবে তিনি অভিমান করে
বলেছিলেন, ‘মা বলেছেন আপনি নাকি অনেক রাত করে বাসায় ফিরেন।’আমি কিছুটা গুছিয়ে তার কারনটা
বলার পর তিনি আরো কয়েকটা কথা যোগ করে দিয়েছিলেন। সেই কথাগুলো হল,‘বাবা-মায়ের পছন্দের বাজার’টা আপনি করবেন। আমি জানি তারা আপনার সামর্থের বাইরে কখনোও কিছু চাননা। আমিও আপনার ঐই সামর্থের বাইরে ইন-শা-আল্লাহ কিছু চাইবনা। রাত জেগে পরিশ্রমের যে ফলটা আপনি পাবেন তা আল্লাহর থেকে নির্ধারন করাই আছে। দামি খাবার খেলে যেমন পেঠ ভরবে, ঠিক তেমনি ডাল ভাত খেলেও ত
পেঠ ভরবে। সুতরাং অল্প একটুও যদি হয়, তাবে আমি সেটাই গ্রহন করব এবং শ্বশুর-শ্বাশুরির সেবা যত্ন করব। আপনি শুধু অল্প হলেও আমাকে হালাল উর্পাজনের খাবার দিবেন ও আমি আপনাকে একজন
নেককার সন্তানের ইন-শা-আল্লাহ বাবা হবার চেষ্টা করব। আপনার শারিরিক,মানসিক আলহামদুলিল্লাহ
সব দিকেই সন্তুষ্ট থাকব।তবে আজ থেকে বেশি রাত করে বাসায় না এসে তারাতারি ফিরবেন।এতে করে
বাবা-মায়ের সাথে গল্প করে তাদের মুখে হাসি ফুঁটিয়ে মহব্বতের নজরে তাকালে অনেকগুন সাওয়াব পেয়ে
যাবেন। তারপর যতটা পারবেন আমাকে সময় দিবেন।আমার সাথে যদি সময় কাঁটান তাহলে আপনিও
অনেক সাওয়াব পাবেন, সাথে এই আপনার স্ত্রীকেও সাওয়াবের ভাগিদারকরবেন।’
-
Tags:
ভালবাসার গল্প