প্রশ্নঃ কুরআন পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা বলে?
এম ডি আলী।
উত্তরঃ আমি সম্পূর্ণ লেখাটি লিখবো অন্ধবিশ্বাসী নাস্তিকদের মূল দাবিকে সামনে রেখে । এতে আপনারা নিজেরাই ওদের মিথ্যাচার ধরতে পারবেন আর আমার জন্য বুঝানো সহজ হবে, আপনাদেরকে । অভিযোগের দাবিকে সামনে রেখে ওরা কুরআনের যে আয়াত গুলো আমাদের সামনে তুলে ধরে সব গুলা আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরব এবং বর্ণনা করব । বিশুদ্ধ দলিল প্রমান যুক্ত করেছি বিধায় লেখাটি বিশাল লম্বা হয়েছে তাই সবর করে পাঠ করবেন।আমি আবারো বলছি ওদের দাবিটি খেয়াল করুন ।
নাস্তিকদের দাবিঃ "কুরআনে পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা বলা হয়েছে"
এখন আমি কুরআনের আয়াত সমূহ তুলে ধরব আর ওদের দাবির সাথে হুবহু শব্দটু শব্দ মিলাতে চেষ্টা করব যে আসলেই কুরআনে “পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা” বলা হয়েছে কিনা নাকি কুরআন অন্য রকম বলছে আর নাস্তিকরা তাদের অন্ধ বিশ্বাস প্রমানে মিথ্যার সাহায্য নিয়ে চলছে।
পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ বিষয়ক কুরআনের আয়াত সমূহঃ
* সুরা বাকারা ২:২২ = যে পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে। অতএব, আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাকেও সমকক্ষ করো না। বস্তুতঃ এসব তোমরা জান।
* সুরা হিজর ১৫:১৯,২০ = আমি ভু-পৃষ্ঠকে বিস্তৃত করেছি এবং তার উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রত্যেক বস্তু সুপরিমিতভাবে উৎপন্ন করেছি। আমি তোমাদের জন্যে তাতে জীবিকার উপকরন সৃষ্টি করছি এবং তাদের জন্যেও যাদের অন্নদাতা তোমরা নও।
* সুরা ত্বা-হা ২০:৫৩ = তিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে শয্যা করেছেন এবং তাতে চলার পথ করেছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা দ্বারা আমি বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি।
* সুরা যূখরুফ ৪৩:১০ = যিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে করেছেন বিছানা এবং তাতে তোমাদের জন্যে করেছেন পথ, যাতে তোমরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পার।
* সুরা ক্বাফ ৫০:৭ = আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালার ভার স্থাপন করেছি এবং তাতে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদগত করেছি।
* সুরা যারিয়াত ৫১:৪৮ = আমি ভূমিকে বিছিয়েছি। আমি কত সুন্দরভাবেই না বিছাতে সক্ষম।
* সুরা নূহ ৭১:১৯,২০ = আল্লাহ তা'আলা তোমাদের জন্যে ভূমিকে করেছেন বিছানা। যাতে তোমরা চলাফেরা কর প্রশস্ত পথে।
* সুরা নাবা ৭৮:৬,৭ = আমি কি করিনি ভূমিকে বিছানা এবং পর্বতমালাকে পেরেক?
* সুরা নাজিয়াত ৭৯:৩০,৩১,৩২,৩৩ =পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।তিনি এর মধ্য থেকে এর পানি ও ঘাম নির্গত করেছেন, পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন,তোমাদের ও তোমাদের চতুস্পদ জন্তুদের উপকারার্থে।
* সুরা গাশিয়াহ ৮৮:১৮,১৯,২০ = এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে উচ্চ করা হয়েছে? এবং পাহাড়ের দিকে যে, তা কিভাবে স্থাপন করা হয়েছে? এবং পৃথিবীর দিকে যে, তা কিভাবে সমতল বিছানো হয়েছে?
* সুরা শামস ৯১:৬ = শপথ পৃথিবীর এবং যিনি তা বিস্তৃত করেছেন, তাঁর ।
* সুরা রহমান ৫৫ঃ১০ = আর যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছেন সৃষ্টজীবের জন্য।
উপরের সব আয়াত গুলোকে সামনে রেখে আমরা যে সারমর্ম স্পষ্ট করতে পারি তা হচ্ছেঃ
১/ ভুমিকে সমতল করা করা হয়েছে পৃথিবীর আকৃতিকে নয়।
২/ ভুমিয়ে বিছিয়ে সেটাতে পাহাড় গেড়ে দেওয়া হয়েছে।
৩/ ভুমিকে বিছিয়ে সেটাকে চলার পথ তৈরি করেছেন মানুষের সহজের জন্য ।
উপরের সব গুলো আয়াতের কোথাও অথবা তিনটি পয়েন্টের কোথাও কি দাবি করা হয়েছে "পৃথিবীর আকার,শেইপ সমতল চ্যাপ্টা" ? উত্তর হচ্ছে না। ইশারাতেও কিন্তু নাস্তিকদের ভ্রান্ত্র দাবিটি সঠিক প্রমান হচ্ছে না । সুতরাং নাস্তিকদের দাবি বাতিল এবং ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কুরআনে এমন একটি আয়াতও কেউ কখনোই দেখাতে পারবে না যেখানে দাবি করা হয়েছে যে “পৃথিবীর আকার আকৃতি শেইপ গোল চ্যাপ্টা সমতল”।
কিছু কথাঃ চিন্তাশীল পাঠক আপনি যদি উপরের সমস্ত আয়াতের তাফসীর এবং ব্যাখ্যা পড়েন আপনি কোথাও এই কথা পাবেন না যে কুরআনের আয়াত বলছে “পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা” । কারন কুরআনের উপরের আয়াত সমূহ এই উদ্দেশ্যেই বলা হয়নি । উপরক্ত আয়াতের সত্য এবং সঠিক তথ্য হল আল্লাহ পৃথিবীর ভুমিকে মানুষের জন্য বিছিয়ে দিয়েছেন।মানুষ পৃথিবীতে বসবাস করছে , সহজে চলাফেরা করছে খাদ্য উৎপাদন করছে , এই কথা একেবারেই আমরা নিজে চোখেই দেখতে পারছি। সুতরাং আয়াতে মোটেও পৃথিবীর আকৃতি নিয়ে কথা হচ্ছে না বরং আল্লাহ আমাদের জন্য ভুমিকে বিছিয়ে দিয়েছেন সেটার কথাই বলা হচ্ছে ভুমিকে বিছিয়ে দেয়া আর পৃথিবীর আকৃতি সমতল দুটি আলাদা বিষয় , যারা এই সাধারন বিষয়ে পার্থক্য করতে পারে না তারা বিনা দলিলে মূর্খ এবং যুক্তিবিদ্যা বুঝে না এবং এরাই ধাপ্পাবাজ প্রতারক নাস্তিকরা।
সুবিধার জন্য সরাসরি বিশুদ্ধ তাফসীরের অনুবাদ তুলে ধরছিঃ
*সুরা বাকারা ২:২২ ব্যাখ্যা ড মুজিবুর রহমান ১ খণ্ড, ১৮৭ পৃষ্ঠাঃ আল্লাহই যমীনকে বিছানা স্বরূপ বানিয়েছেন এবং আকাশকে ছাঁদ করেছেন । যেমন অন্য আয়াতে আছে, আমি আকাশকে নিরাপদ চাঁদোয়া বা ছাঁদ বানিয়েছি এবং এতদসত্ত্বেও তারা নির্দেশনাবলী হতে মুখ ফিরিয়ে রাখে । আকাশ হতে বারিধারা বর্ষণ করার অর্থ হল মেঘমালা হতে বৃষ্টি বর্ষণ করা এমন সময়ে যখন মানুষ ও পূর্ণ মুখাপেক্ষী থাকে । অতপর ঐ পানি থেকে বিভিন্ন প্রকারের ফলমূল উৎপন্ন করা, যা থেকে মানুষ এবং জীবজন্তু উপকৃত হয় । যেমন কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় এর বর্ণনা এসেছে । এক স্থানে মহান আল্লাহ বলেছেন তিনি আল্লাহ যিনি তোমাদের জন্যে যমীনকে বিছানা ও আকাশকে ছাঁদ স্বরূপ বানিয়েছেন , সুন্দর সুন্দর কমনীয় আকৃতি দান করেছেন, ভাল ভাল এবং স্বাদে অতুলনীয় আহার্য পৌঁছিয়েছেন।
* তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন ১ খণ্ড, ৫৮ পৃষ্ঠাঃ শাব্দিক অনুবাদ, তিনি এমন, যিনি করেছেন, তোমাদের জন্যে যমীনকে বিছানাস্বরূপ এবং আসমানকে ছাঁদ স্বরূপ আর বর্ষণ করেছেন আসমান হতে পানি , উৎপন্ন করেছেন তা দ্বারা ফলসমূহ, তোমাদের খাদ্যরুপে......
* তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ১ খণ্ড, ৮৩ পৃষ্ঠাঃ পৃথিবীতে মানুষের সাচ্ছন্দে জীবন যাপনের ব্যবস্থা করেছেন । পৃথিবীকে বিছানার মতো আরামদায়ক ও নিরাপদ অবস্থান স্থল বানিয়েছেন । আল্লাহ পেতে দেয়া এই বিছানাটার কথা মানুষ ভুলে যায় । কারন এটি তাদের চোখে অনেক দীর্ঘ ও বিস্তৃত । জীবন যাপনের উপকরণ সরবরাহের জন্য আল্লাহ তা"লা এ পৃথিবীতে যে সমন্বয় ও সাযুজ্য সৃষ্টি করেছেন , আরাম আয়েশ, বিশ্রাম ও আনন্দের যে উপকরণ তার করায়ত্ত করে দিয়েছেন , তাকে সে বিস্তৃত হয় । এই সাযুজ্য ও সামঞ্জস্য যদি সৃষ্টি না করা হতো তাহলে এই গৃহে এত সহজে ও সাচ্ছন্দে জীবন যাপনের কোন সুযোগ থাকতো না ।
* তাফসীরে মাযহারী ১ খণ্ড, ৭০ পৃষ্ঠাঃ আল্লাহ তা"লা পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন শয্যারুপে । শয্যা অর্থ এমন বিছানা যা বসোপযোগী । অতি শক্ত নয় । অতি কমলও নয় ।
সিদ্ধান্তঃউপরের আয়াত এবং তাফসীর খেয়াল করুন তো , কোথায় বলা হচ্ছে "পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা"?এরকম কিছুই বলা হয়নি।মূলত উপরের আয়াতে "ভুমিকে বিছানা বলতে" আমরা যেখানে হাঁটাচলা করছি অর্থাৎ সমতল ভুমিতে সেটার কথাই বলা হচ্ছে।“পৃথিবী পুরাটাই সমতল চ্যাপ্টা” অথবা “অর্ধেক চ্যাপ্টা” অথবা “অর্ধেক গোল” এরকম কিছুই বলা হচ্ছে না সরাসরি অথবা ইশারাতেও । আরও খেয়াল করুন আয়াত বর্ণনার পরেই কিন্তু সাথে সাথে বলা হচ্ছে যে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং ফসল উৎপাদন করেছেন যাতে আমরা খাদ্য পাই , বৃষ্টি কিন্তু উপর থেকেই পরে আর আমরা কিন্তু ভুমিতে বসবাস করছি এটি কিন্তু আমরা নিজ চোখেই দেখছি তাহলে কুরআনের আয়াত কিভাবে বলতে পারে যে পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা ? উত্তর হচ্ছে কুরআন এই কথা কখনোই বলে না । চাক্ষুষ প্রমানিত হচ্ছে যে নাস্তিকরা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা এবং আমাদেরকে মিথ্যা কথা বলেছে। আসলে এটাই ওদের নাস্তিক্যধর্মের আদর্শ।
উপরের আয়াত সমূহের তাফসীরে যা যা বলা হয়েছে জানতে চাইলে আরও রেফারেন্স গুলো দেখতে পারেন।
* সূরা বাকারা ২:২২ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১ খণ্ড, ১৮৭ পৃষ্ঠা । তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন ১ খণ্ড, ৫৮ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ১ খণ্ড,৮৩ পৃষ্ঠা । তাফসীরে মাযহারী ১ খণ্ড, ৭০ পৃষ্ঠা ।
* সূরা হিজর ১৫:১৯ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৩ খণ্ড, ৯৯ পৃষ্ঠা । তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন ২ খণ্ড, ১৬৯ পৃষ্ঠা । তাফসীরে মাযহারী ৬ খণ্ড ৪৩২ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ১২ খণ্ড, ৩২ , ৩৩ পৃষ্ঠা।
* সূরা তাহা ২০:৫৩ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৪ খণ্ড, ২৫৫ পৃষ্ঠা । তাফসীরে মাযহারী ৭ খণ্ড, ৪৭৬ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ১৩ খণ্ড, ৮৯ পৃষ্ঠা ।
* সূরা নুহ ৭১:১৯,২০ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৭ খণ্ড, ৬৭৭ পৃষ্ঠা । তাফসিরে ইবনে আব্বাস ৩ খণ্ড, ৫৬৪,৫৬৫ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ২১ খণ্ড, ১৬৪ পৃষ্ঠা । তাফসীরে আহসানুল বয়ান ১০২৩ পৃষ্ঠা । তাফসীরে মাযহারী ১২ খণ্ড , ১২৫ পৃষ্ঠা ।
* সূরা নাবা ৭৮:৬,৭ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৮ খণ্ড, ১৯ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ইবনে আব্বাস ৩ খণ্ড, ৬১২ পৃষ্ঠা। তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ২২ খণ্ড, ১৭ , ২০ পৃষ্ঠা।তাফসীরে মাযহারী ১২ খণ্ড, ৩০৭ পৃষ্ঠা । তাফহিমূল কুরআন, সূরা নাবা আয়াত ৬,৭ ।
* সূরা যুখরুফ ৪৩:১০ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৬ খণ্ড, ৫৫৯ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ইবনে আব্বাস ৩ খণ্ড, ২৬৯ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ১৮ খণ্ড , ২০২ পৃষ্ঠা । তাফসীরে মাযহারী ১০ খণ্ড, ৪৭১ পৃষ্ঠা । তাফসীরে আহসানুল বয়ান ৮৫৪ পৃষ্ঠা । তাফহিমূল কুরআন, সূরা যুখরুফ আয়াত ১০, ১০৪ পৃষ্ঠা ।
* সূরা ক্কাফ ৫০:৭ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৭ খণ্ড, ৫৮ পৃষ্ঠা । তাফসীরে জালালাইন ৬ খণ্ড, ১৮৩ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ইবনে আব্বাস ৩ খণ্ড, ৩৬০ পৃষ্ঠা ।
* সূরা যারিয়াত ৫১:৪৮ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৭ খণ্ড, ১০৬ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ইবনে আব্বাস ৩ খণ্ড, ৩৭৭ পৃষ্ঠা । তাফসীরে মাযহারী ১১ খণ্ড, ১১৫ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ১৯ খণ্ড, ২২২ পৃষ্ঠা।
* সূরা নাজিয়াত ৭৯:৩০ - ৩৩ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৮ খণ্ড, ৪২ , ৪৪ পৃষ্ঠা । তাফসীরে জালালাইন ৭ খণ্ড, ৩১৩ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ইবনে আব্বাস ৩ খণ্ড, ৬২৩ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ফী যিলালিল কুরআন ২২ খণ্ড(আমপারা), ৩২ পৃষ্ঠা ।
* সূরা গাশিয়া ৮৮:১৯,২০ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৮ খণ্ড, ১৪২ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ইবনে আব্বাস ৩ খণ্ড, ৬৬৭ পৃষ্ঠা । তাফহিমূল কুরআন, সূরা গাশিয়া ১৯,২০ আয়াত, ৯৯ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ২২ খণ্ড(আমপারা), ১৭৩ পৃষ্ঠা । তাফসীরে আহসানুল বয়ান ১০৮০ পৃষ্ঠা । তাফসীরে মাযহারী ১২ খণ্ড, ৪৪৮ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ওসমানী ৭ খণ্ড, ৩৭৭ পপৃষ্ঠা ।
* সূরা শামস ৯১:৬ = তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৮ খণ্ড, ১৭৫ পৃষ্ঠা । তাফসীরে ইবনে আব্বাস ৩ খণ্ড, ৬৮০ পৃষ্ঠা।তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ২২ খণ্ড, ২০৭ পৃষ্ঠা ।তাফসীরে ওসমানী ৭ খণ্ড, ৩৯০ পৃষ্ঠা।
নাস্তিকদের গোঁজামিলঃ
ওদের কুযুক্তি হচ্ছে পৃথিবীকে যেহেতু কার্পেট ও বিছানার সাথে তুলনা করা হয়েছে, তাই কুরআন পৃথিবীকে সমতল বলেছে।
* সুরা গাশিয়াহ ৮৮:১৮,১৯,২০ = এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে উচ্চ করা হয়েছে? এবং পাহাড়ের দিকে যে, তা কিভাবে স্থাপন করা হয়েছে? এবং পৃথিবীর দিকে যে, তা কিভাবে সমতল বিছানো হয়েছে?
* সুরা শামস ৯১:৬ = শপথ পৃথিবীর এবং যিনি তা বিস্তৃত করেছেন, তাঁর ।
* সুরা নাজিয়াত ৭৯:৩০,৩১,৩২,৩৩ =পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।তিনি এর মধ্য থেকে এর পানি ও ঘাম নির্গত করেছেন, পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন,তোমাদের ও তোমাদের চতুস্পদ জন্তুদের উপকারার্থে।
গোঁজামিল খণ্ডনঃ
এসব আয়াতে "সমতল বিছানো হয়েছে" বা “পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন” লেখা আছে বিধায় নাস্তিকরা বলতে চায় এখানে “পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা” কিন্তু পাঠক আয়াত গুলো যদি একটু মনোযোগের সাথে পড়েন , দেখতে পাবেন পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন বলার পরেই আরও বলেছেন যে এর মধ্য থেকে পানি ও ঘাম নির্গত করেছেন । পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন,তোমাদের ও তোমাদের চতুস্পদ জন্তুদের উপকারার্থে। আয়াতে পরিষ্কার বলাই হচ্ছে তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুদের উপকারের জন্য । প্রশ্ন হচ্ছে আমরা পৃথিবীর কোথায় ? অবশ্যই ভুমিতে । আয়াতের উদ্দেশ্য সুস্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে এখানে পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন বলতে আসলে ভুমিকেই বিস্তৃত করেছেন আর এটাই কুরআনের উদ্দেশ্য।
ধরুন আমি বললাম গাড়িতে আমি চাকা তৈরি করেছি। এর মানে এই না যে গাড়িটি চাকার মত গোল।আমি বললাম আমি গাড়িটিকে এমন ভাবে তৈরি করেছি যেমন গাড়িটি বিছানার উপরে চলতে পারে। জ্ঞানী মানুষরা অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন যে এখানে গাড়িটিকে বিছানায় চলতে বলা মানে মাটির উপরে অথবা ভুমির উপরে চলাই বুঝানো হয়েছে এরমানে এই না যে গাড়িটির আকৃতি মাটির মত বিছানো।
ঠিক একইভাবে আল্লাহ ভুমিকে বিছিয়ে দিয়েছেন বলা হয়েছে এরমানে এই না যে পৃথিবীর আকৃতির শেইপ চ্যাপ্টা সমতল এটা বুঝানো হয়েছে বরং মানুষ যে ভুমিতে বসবাস করে সেটার কথাই বলা হচ্ছে আর সেটা বিছানোই।আমরা নিজেরাই সেটা দেখতে পাচ্ছি।
কুরআনে এমন কোন আয়াত নেই যেখান থেকে কেউ পৃথিবীর আকারকে অকাট্য যুক্তি দিয়ে সমতল বানাতে পারে। আপনি যদি কুরআনের বিছানা বা কার্পেট সংক্রান্ত আয়াতগুলো দেখেন- তাহলে দেখবেন- ভূমিকে বিছানো হয়েছে- এই কথা বলার সাথে সাথেই তোমরা চলাফেরা করতে পারো, ফসল উৎপন্ন করতে পারো- এই কথাগুলো বলা হয়েছে। কথাগুলো দিয়ে ভুমির ব্যাপারটাই নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু নাস্তিক্যধর্মের ব্রেইন ওয়াশ্ড নাস্তিকদের এগুলো চোখে আসবে না।
পৃথিবী আকৃতি গোলাকার কুরআনের ইশারা
এবার আমরা কুরআনে পৃথিবীর আকারকে যে সমতল বলা হয় নি, বরং গোলাকারের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে সে ব্যাপারে পয়েন্ট বাই পয়েন্ট আলোচনা করার চেষ্টা করবো। তবে তার আগে আপনাদের কাছে আমার একটা জিজ্ঞাসা, পৃথিবীর আকার গোলাকার- এটা কি কুরআনে বলা খুব জরুরি? বলে রাখি কুরআন কোন ভূগোলের কিতাব নয় যে, তাতে ভৌগলিক সব তথ্য থাকবে!তেমনি কুরআন শুধু কবিতার গ্রন্থও নয়,ইতিহাসের গ্রন্থ নয়,নয় শুধু বিজ্ঞানের গ্রন্থ বরং কুরআন এমন এক গ্রন্থ যা মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শন করে।মানুষকে সৃষ্টিকর্তার সাথে পরিচয় করানো এবং সঠিক পথ দেখিয়ে দেওয়াই কুরআনের দায়িত্ব। এজন্য কুরআন সর্বকালের সর্বোন্নত মানের সাহিত্যিক ভাষায় কখনো ইতিহাস,কখনো বায়োলজি আবার কখনো ভূগোল আবার কখনো বিজ্ঞানের অন্যান্য তথ্যের নিদর্শন পেশ করেছে|কুরআনে যা পেশ করা হয়েছে, তার সবকিছুর মধ্যেই মানুষের জন্য শিক্ষার আলো ও পথের দিশা রয়েছে| । মানবজাতির চরিত্রকে আদর্শ করে তুলতে দিক নির্দেশনার জন্য কুরআন নাযিল হয়েছে, আমাদেরকে Geography, Astronomy শেখাতে নয়। যাই হোক, আমরা আমাদের মূল আলোচনায় ফিরে যাই।
১ নং প্রমানঃ
> তাফসীরে জালালাইন ৭ খণ্ড, ৩৯৩ পৃষ্ঠাঃ সুরা ইনশিকাক ৮৪:৩ = আর যখন পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করা হবে এর প্রশস্ততা বৃদ্ধি করা হবে, যেমন চামড়াকে টেনে দীর্ঘ করা হয়। আর তার উপর কোন পাহাড় বা দালান-কোঠা থাকবে না।
বিশ্লেষণঃ“পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করা হবে চামড়াকে টেনে দীর্ঘ করার মত” এর মানে এখন পৃথিবী চামড়ার মত সম্প্রসারিত নয় অর্থাৎ এখন পৃথিবী গোল। যদি আল্লাহ্ পৃথিবীকে সমতলই বলতেন, তাহলে আবার সমতল করার কথা বলবেন কেন? এই আয়াত থেকেই স্পষ্ট বুঝা যায়, কুরআনে পৃথিবীকে সমতল বলা হয় নি।
তাফসীরে জালালাইন ৭ খণ্ড, ৩৯৪ পৃষ্ঠাঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ পৃথিবীকে সমতল করে বিস্তৃত করবেন।এর তাৎপর্য হলো যে সমুদ্র ও নদী-নালা ভর্তি করে দেয়া হবে।......হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) বলেন – নবীজি (সা) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন পৃথিবীকে দস্তরখানের ন্যায় বিছিয়ে দেয়া সম্প্রসারিত করা হবে। সেখানে মানুষদের জন্য শুধু পা রাখারই জাগা হবে। > পরিষ্কার কথা পৃথিবী এখন সমতল না দেখেই আল্লাহ কিয়ামতের দিন সমতল করে বিস্তৃত করে দিবেন।
তাফসীরে ইবনে আব্বাস, ৩ খণ্ড, ৬৪৯ পৃষ্ঠাঃ যখন পৃথিবী সস্থান থেকে অপসারিত হবে এবং সমান করা হবে।একই ধরনের তথ্য তাফসীরে মাজহারী ১২ খণ্ড, ৪০৩ পৃষ্ঠায় দেয়া আছে।
উদাহরণ, আমি ভাত খাব।ভাত কেন খাওয়া হয়?যখন ক্ষুধা লাগে তখন। ক্ষুধা না লাগলে ভাত খাওয়ার কোঠা আসবে না।ঠিক একইভাবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ চামড়ার মত টেনে পৃথিবীকে আরও সম্প্রসারিত করবেন আর মানে এখন পৃথিবী চামড়ার মত নেই।তাহলে কিভাবে আছে?গোল আকারে।
২ নং প্রমানঃ
* সুরা গাশিয়াহ ৮৮:১৮,১৯,২০ = আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে উচ্চ করা হয়েছে? এবং পাহাড়ের দিকে যে, তা কিভাবে স্থাপন করা হয়েছে? এবং পৃথিবীর দিকে যে, তা কিভাবে সমতল বিছানো হয়েছে?
বিশ্লেষণঃ আয়াতটি খেয়াল করুন। এই আয়াতের কেন্দ্রবিন্দু হলেন আপনি কারন আপনাকে দেখতে বলা হচ্ছে। আপনি আয়াতে যা যা কমান্ড করা হচ্ছে ফলো করতে থাকুন। আকাশে দিকে তাকালেন দেখলেন সেটা অনেক উচ্চ এরপরে পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন কতো মজবুত ভাবে স্থাপন করা এরপরে পৃথিবী অর্থাৎ ভূমির দিকে দেখলেন আসলেই ভূমিকে সমতল বিছানা হয়েছে। এটা তখনই সম্ভব যখন দুনিয়ার শেইপ গোলাকার। না হলে আকাশের উচ্চতার কথা কেন বলা হবে?
আর কুরআন অনুযায়ী দুনিয়ার শেইপ যদি সমতল চ্যাপ্টাই হতো তাহলে আকাশের উচ্চতার দিকে কখনোই আল্লাহ তাকাতে বলতেন না। কারন তখন দুনিয়া আর আকাশ স্যান্ডউইচের মতো হতো! মিশ্রন! কিন্তু কুরআন এমন কিছুই বলচহে না। কুরআন আপনাকে আকাশের উচ্চতার দিকে তাকাতে বলেছে, পাহাড়ের দিকে তাকাতে বলেছে, ভূমির দিকে তাকাতে বলেছে। প্রমাণিত যে পৃথিবী যে গোলাকার কুরআন সেটাই ইশারা করছে।
৩ নং প্রমানঃ
* সূরা যুমার ৩৯:৫ =“তিনি রাত্রি দ্বারা দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং রাত্রিকে আচ্ছাদিত করেন দিন দ্বারা।”
বিশ্লেষণঃ উপরের আয়াতটিতে যে আরবি শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি হলো “ ﻳُﻜَﻮِّﺭُ ”। যার অর্থ কোন জিনিসকে প্যাঁচানো বা জড়ানো, যেমনটা মাথার পাগড়ির ক্ষেত্রে বুঝানো হয়। অবিরত প্যাঁচানোর পদ্ধতি- যাতে এক অংশ আরেক অংশের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। আমরা ভালোভাবেই জানি, পাগড়ি কিভাবে গোলাকারভাবে প্যাঁচানো হয় অথবা টেনিস বলে কসটিপ কিভাবে প্যাঁচানো হয়।
এই আয়াতে বলা হচ্ছে, রাত ধীরে ধীরে ক্রমশ দিনে রূপান্তরিত হয়, অনুরূপভাবে দিনও ধীরে ধীরে রাতে রূপান্তরিত হয়। এ ঘটনা কেবল পৃথিবী গোলাকার হলেই ঘটতে পারে। পৃথিবীকে যদি চ্যাপ্টা বা সমতল কুরআন দাবি করতো তাহলে রাত্রি থেকে দিনে এবং দিন থেকে রাত্রিতে এই কথা কুরআন বলতো না।
এছাড়া দেখুন আরও দুইটা আয়াত-
* সূরা নূর ২৪:৪৪ = “আল্লাহ দিন ও রাত্রির পরিবর্তন ঘটান। এতে ‘অর্ন্তদৃষ্টি-সম্পন্নগণের’ জন্যে চিন্তার উপকরণ রয়েছে।
* সূরা আল ইমরান ৩:১৯০ = নিশ্চয়ই মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং ‘রাত ও দিনের আবর্তনে বিশেষ নিদর্শন রয়েছে’ জ্ঞানবান লোকদের জন্য।
আল্লাহ্ কেন বললেন অন্তর্দৃষ্টির কথা? কেন বললেন না বাহ্যিক দৃষ্টির কথা? আমরা বাহ্যিকভাবে দেখি, সূর্য উদিত হয় বা অস্ত যায়। আসলেই কি তাই? ‘রাত ও দিনের আবর্তনে বিশেষ নিদর্শন রয়েছে’- কি এমন ‘বিশেষ’ জিনিস রয়েছে যাতে আমাদের অন্তর্দৃষ্টি দিতে হবে? অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখার আর পাগড়ির মত প্যাঁচানোর কথা বলে এখানে ইঙ্গিতে পৃথিবীর স্ফেরিক্যাল শেপ এবং ঘূর্ণায়মানতার কথা বলা হয়েছে।
৪ নং প্রমানঃ
* সূরা রাহমান ৫৫:১৭ = “তিনি দুই পূর্বের প্রভু, আর দুই পশ্চিমেরও প্রভু।
বিশ্লেষণঃ কুরআনে যদি পৃথিবীকে সমতলই বলা হত- তাহলে দুইবার পূর্ব আর দুইবার পশ্চিমের কথা বলা হল কেন? পৃথিবী যদি সমতল হত তাহলে সমগ্র পৃথিবীতে সূর্যের উদয় ও অস্ত একবার করে হত। কিন্তু পৃথিবী গোলাকার হওয়ায় এমনটা হয় না। কারণ আপনি যখন দেখছেন সূর্য উঠছে, তখন আসলে অন্য জায়গায় সূর্য ডুবছে। আর যখন দেখছেন সূর্য ডুবছে, তখন আসলে অন্য অবস্থানে সূর্য উঠছে(প্রকৃতপক্ষে সূর্য অস্ত বা উদয় কোনোটাই হয় না। বুঝানোর সুবিধার্থে এভাবে বললাম)। মোট দুইটা পূর্ব, দুইটা পশ্চিম।
তাফসীরে আবু বকর জাকারিয়া, সুরা রাহমান ৫৫ঃ১৭, তে বলা হয়েছেঃ অনুরূপ পৃথিবীর এক গোলার্ধে যখন সূর্য উদয় হয় ঠিক সে সময় অন্য গোলার্ধে তা অস্ত যায়। এভাবেও পৃথিবীর দুটি উদয়াচল ও অস্তাচল হয়ে যায়।[ইবন কাসীর; আততাহরীর ওয়াততানিওয়ীর]
৫ নং প্রমানঃ
পৃথিবীর আকার যে গোলাকার- এ ব্যাপারে ইসলামিক স্কলারদের অসংখ্য ফতওয়া রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে তাইয়িম্যার ফতওয়া রয়েছে। গত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামিক স্কলার শাইখ আব্দুল আজিজ ইবন বাযেরও এই ব্যাপারে ফতওয়া রয়েছে। কুরআনের আয়াত গুলো যে দুনিয়ায় গোলাকার সেই দিকে ইশারা করছে সেটা তিনিও স্বীকার করেছেন।
রেফারেন্সঃ Majmû` al-Fatâwâ (5/150), Majmû` al-Fatâwâ (6/546-567)
৬ নং প্রমানঃ
গত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামিক স্কলার শাইখ আব্দুল আজিজ ইবন বাযেরও এই ব্যাপারে ফতওয়া রয়েছে।
রেফারেন্সঃ http://www.binbaz.org.sa/noor/9167
৭ নং প্রমানঃ
এছাড়াও আপনি দেখতে পারেন IslamQA-র ফতওয়া। আরও দেখতে পারেন IslamWeb-এর ফতওয়া। সবাই স্বীকার করেছেন যে কুরআনে পৃথিবীর আকার গোলাকার বলা হয়েছে।
রেফারেন্সঃ
৮ নং প্রমানঃ
ইমাম ইবনু হাযম আন্দালুসী (৩৮৪-৪৫৬ হিঃ) সূরা যুমার ৫ আয়াত থেকে দলীল দিয়ে বলেন, ‘নেতৃস্থানীয় বিদ্বানগণের কেউই পৃথিবী গোলাকার হওয়ার ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেননি। কিংবা এর বিরুদ্ধে তাদের কারু থেকে কোন বক্তব্য জানা যায়নি। বরং কুরআন ও হাদীছে এর গোলাকার হওয়ার পক্ষেই দলীল এসেছে (ইবনু হাযম, আল-ফিছাল ফিল মিলাল ১/৩৫২ ‘পৃথিবী গোলাকার হওয়া’ অনুচ্ছেদ)।
৯ নং প্রমানঃ
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (৬৬১-৭২৮ হিঃ) বিখ্যাত বিদ্বান আবুল হুসায়েন আহমাদ বিন জাফর (রহঃ)-এর বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কোন মতভেদ নেই। তিনি বলেন, এর প্রমাণ হিসাবে বলা যায়, ‘পৃথিবীর কোন প্রান্তে সূর্য, চন্দ্র বা নক্ষত্ররাজি একই সময়ে উদিত হয় না বা অস্তও যায় না। বরং পশ্চিমের আগে তা পূর্বে উদিত হয়’ (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৫/১৯৫)।
১০ নং প্রমানঃ
তিনি (আল্লাহ) রাত্রি দ্বারা দিবসকে আচ্ছাদিত করেন এবং দিবস দিয়ে রাত্রিকে আচ্ছাদিত করেন...।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৫)। এ আয়াতে রাত্রি ও দিবসের পরিবর্তনের বিষয়টিকে ‘ইকাউভিরু/ইউকাউ-ইরু’ শব্দ দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। কোরআনের অনুবাদকরা এ শব্দের জন্য ‘আচ্ছাদিত হওয়া’র অর্থ বেছে নিয়েছেন। কিন্তু এটি ওই শব্দের সরাসরি অনুবাদ নয়, ভাব-স্থানীয় বা সমার্থক শব্দ। ওই শব্দের মূল অর্থ কোনো কিছু গোল বানানো। যেমন—মাথায় পাগড়ি পেঁচানো। এ শব্দ পৃথিবী গোলাকার হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। কেননা রাতকে দিন দ্বারা ও দিনকে রাত দ্বারা এভাবে আচ্ছাদিত করা তখনই সম্ভব, যখন পৃথিবীর আকার গোল হবে। আমরা দেখি প্রথমে ভোর, এরপর আস্তে আস্তে দুপুর, এরপর বিকেল, এরপর গোধূলি, এরপর সন্ধ্যা। একসময় দিন রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, যেভাবে আস্তে আস্তে পাগড়ির একটা অংশ অন্য অংশের মধ্যে ঢুকে পড়ে। যদি পৃথিবী সমতল হতো, একটা লম্বা কাঠের মতো হতো, তাহলে এভাবে দিন-রাত্রি হতো না। তখন এই তো দিন, আবার চোখের পলকে রাত নেমে পড়ত। তাই এ আয়াতে মহান আল্লাহ রাতকে দিন দিয়ে, আর দিনকে রাত দিয়ে আচ্ছাদিত করার যে প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন, সেটা তখনই সম্ভব যখন পৃথিবী গোলাকার হবে। সুতরাং কোরআন সরাসরি না বললেও ইঙ্গিত দিয়েছে যে পৃথিবী গোলাকার। আধুনিক বিজ্ঞানের বহু আগে কোরআনের এ আয়াত পাঠ করে ইমাম ইবনে হাজম আন্দালুসি (রহ.) পৃথিবী গোলাকার হওয়ার কথা বলেছেন। তিনি একাদশ শতাব্দীতে (৩৮৪-৪৫৬ হিজরি) ইন্তেকাল করেছেন। (ইবনে হাজম, আল-ফিছাল ফিল মিলাল : ১/৩৫২)
১১ নং প্রমানঃ
একাধিক বিশেষজ্ঞ পৃথিবীর গোলক হওয়ার পক্ষে ইজমা উল্লেখ করেছেন। উদাহরণস্বরূপঃ
وقال أبو محمد ابن حزم رحمه الله : ” مطلب بيان كروية الأرض :
قال أبو محمد وهذا حين نأخذ إن شاء الله تعالى في ذكر بعض ما اعترضوا به ، وذلك أنهم قالوا : إن البراهين قد صحت بأن الأرض كروية ، والعامة تقول غير ذلك ، وجوابنا وبالله تعالى التوفيق : أن أحداً من أئمة المسلمين المستحقين لاسم الإمامة بالعلم رضي الله عنهم لم ينكروا تكوير الأرض ، ولا يحفظ لأحد منهم في دفعه كلمة ، بل البراهين من القرآن والسنة قد جاءت بتكويرها … ” وساق جملة من الأدلة على ذلك “الفصل في الملل والأهواء والنحل” (2/78) .
আবু মুহাম্মাদ ইবনে হাযম [রাহঃ] ৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ] বলেনঃ পৃথিবী গোল হওয়ার পক্ষের দলিল হলঃ
আবু মুহাম্মাদ বলেনঃ আমরা পৃথিবীর গোল হওয়ার বিপক্ষের কিছু দলিল নিয়ে আলোচনা করব। পৃথিবীর গোল হওয়ার পক্ষে স্পষ্ট দলিল রয়েছে, কিন্তু সাধারণ মানুষেরা অন্যরকম বলে। আমাদের জবাব হল-আল্লাহ সকল ক্ষমতার উৎস- ইমাম বলে অভিহিত করার যোগ্যতা রাখে এবং জ্ঞানী এমন কোন বিশিষ্ট মুসলিম পৃথিবীর গোল হওয়ার ব্যাপারটি অস্বীকার করেন নি, এবং তাদের থেকে অস্বীকার করার জন্য কোন বর্ণনা পাওয়া যায় নি। বরং, কুরআন ও সুন্নাহ থেকে বর্ণিত যে,এটা গোল… এবং তিনি এর পক্ষে দলিল দেন।
[ইবনু হাযম, আল-ফিছাল ফিল মিলাল ওয়াল আহ-ওয়া আল মিলাল ২/৭৮ ‘পৃথিবী গোলাকার হওয়া’ অনুচ্ছেদ]
পৃথিবীর গোল হওয়ার ব্যাপারের দলিল হলঃ আল্লাহ বলেন,
يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ ‘তিনিই দিবসের উপর রাত্রিকে এবং রাত্রির উপর দিবসকে আবেষ্টনকারী বানিয়েছেন’ (যুমার ৫)
ইবনে হাযম দলিল হিসাবে উপরের আয়াতটি উল্লেখ করেন।
ইমাম আবু ইয়ালা [রাহঃ] বলেন, “মুসলিমদের ঐক্যমতে পৃথিবী গোল”। [ত্বাবাক্বাত আল-হাম্বলী]
সম্ভাব্য অপযুক্তিঃ তারা গোল বলেছেন, গোলক বলেন নি।
জবাবঃ এসব হল শব্দের মারপ্যাঁচ। আমরাও কথায় কথায় পৃথিবীকে গোল বলি, গোলক বলি না। তারা গোল বলতে গোলকই বুঝিয়েছেন। এর প্রমাণ হল-
ইবনে হাযম অন্যত্র বলেন, “পৃথিবীর গোলক হওয়াই সুপ্রসিদ্ধ…এর প্রমাণ হল সূর্য পৃথিবীর বিশেষ স্থানের উলম্ব বরাবর থাকে”। [ আল ফাসল ফীল মিলাল, ২য় খন্ড, ৯৮ পৃ.]
ইবনে তাইমিয়া বলেনঃ আকাশের সকল বস্তুই গোল- যেহেতু সকল জ্যোতির্বিদ ও গণিতবিদরা এটাই বলেন। আবুল হুসাইন ইবনে আল-মুনাদি [রাহঃ], আবু মুহাম্মাদ ইবনে হাযম [রাহঃ], আবুল ফারাজ ইবনে আল জাওযীর মতো মুসলিম মনীষীদের মতামত হলঃ মুসলিম উলামা এব্যাপারে সহমত। বস্তুত, আল্লাহ তা’আলা বলেন, তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই ফালাকে বিচরণ করে। [ সূরা ২১ আয়াত ৩৩] ইবনে আব্বাস [রাঃ] বলেন, ফালাক মানে চড়কা [সাইকেলের চাকার মত]
[এখানে সূর্য, চাঁদ ,নক্ষত্রকে গোল বলা হয়েছে; গোলক বলা হয় নি। তার মানে এই না যে তারা সূর্য, চাঁদ ,নক্ষত্রকে দ্বিমাত্রিক ভাবত।]
ইবনে তাইমিয়া বলেনঃ ফালাক মানে গোল। [মাজমু আল-ফাতওয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ৫৬৬-৫৬৭]
তিনি [মাজমু আল-ফাতওয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ৫৬৫-৫৬৬]-তে বলেন যে,
যেহেতু পৃথিবীর অপর পার্শ্ব পানি দ্বারা বেষ্টিত [তখনও আমেরিকা আবিষ্কৃত হয় নি, কাজেই আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে কোন ভূখন্ড নেই বলেই তখনকার লোকেরা মনে করত] আর সেখানে কোন মানুষ বা এরকম কিছুই নেই। এমনকি যদিও আমরা ধরে নিই যে অপর পার্শ্বে মানুষ আছে, এরকম ক্ষেত্রেও তারা পৃথিবীর পৃষ্ঠেই আছে। অপর পার্শ্বের লোকেরা এই অংশের মানুষদের নিচে নয়, আবার এই অংশের লোকেরা অপর পাশের মানুষেরও নিচে নয়। কারন প্রত্যেক গোলকীয় বস্তু একটি বিন্দুকে [মারকাজ] ঘিরে থাকে [বুঝা গেল, তিনি গোলক কি সেটা সাধারণ মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন] গোলকীয় বস্তুর কোন পাশ অপর পাশের নিচে হতে পারে না, এভাবে উত্তর মেরুও দক্ষিণ মেরুর নিচে হতে পারে না। [মুসলিমরা যখন প্রথম পৃথিবীর মানচিত্র এঁকেছিল; তখন উত্তর মেরু নিচে ও দক্ষিণ মেরু উপরে এঁকেছিল, তিনি সেটাই বুঝাচ্ছেন।] (সংক্ষিপ্ত)
উপরের আলোচনা থেকে বুঝাই যাচ্ছে যে, তিনি বলতে চাচ্ছেন পৃথিবী গোলক। আর গোলক পৃথিবী থেকে দৃশ্যমাণ নক্ষত্র, চাঁদ, সূর্যকে দ্বিমাত্রিক হবে এমন ভাবাও অযৌক্তিক। বিশেষ করে, যখন এরা সকলে গতিশীল আর প্রচন্ড তাপ প্রদানকারী বস্তু সূর্যকে দ্বিমাত্রিক বলা বোকামি। আদিম মানুষেরাও এরকম ভাবত কিনা সন্দেহ। অর্থাৎ আকাশের বস্তুগুলো গোলকের ন্যায়। এবং পৃথিবী নিজেও গোলক, যার মানে হল- উলামা পৃথিবীকে আকাশে [মহাশূণ্যে] অবস্থিত বলেই মনে করতেন।
وكذلك أجمعوا على أن الأرض بجميع حركاتها من البر والبحر مثل الكرة . قال : ويدل عليه أن الشمس والقمر والكواكب لا يوجد طلوعها وغروبها على جميع من في نواحي الأرض في وقت واحد ، بل على المشرق قبل المغرب ” انتهى من “مجموع الفتاوى” (25/195) باختصار .
আবুল হুসাইন ইবনে আল-মুনাদি [রাহঃ] থেকে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া [রাহঃ] [১৩২৮ খ্রিস্টাব্দ] বর্ণনা করেন, যখন সে বললঃ আবুল হুসাইন আহমাদ ইবনে জাফর ইবনে আল-মুনাদি [রাহঃ] দ্বীনি বিষয়ে গবেষণা ও কর্মের জন্য সুপরিচিত বিশিষ্ট উলামা থেকে এবং ইমাম আহমাদের দ্বিতীয় স্তরের সাথীদের থেকে বর্ণনা করেন, যে উলামার মাঝে এ ব্যাপারে মতপার্থক্য ছিল না যে আকাশ হচ্ছে বলের মত।[এটা অনেকগুলো মতের একটি-অনুবাদক।]
সে বললঃ একইভাবে, সর্বসম্মতিক্রমে জলভাগ ও স্থলভাগসহ সকল কিছু ধারণকারী এই পৃথিবী একটি বল [গোলক]-এর ন্যায়। সে বলল, এটা এই ঘটনা দ্বারা বুঝা যায় যে, পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে একই সময়ে সূর্য,চাঁদ, নক্ষত্র অস্ত যায় না; বরং প্রাচ্যে পাশ্চাত্যের আগেই সূর্য অস্ত যায়।
[ মাজমু’ আল-ফাতাওয়া ২৫\১৯৫]
মুসলিম বিজ্ঞানী আল বিরুনী তৎকালীন খলীফা-র নির্দেশে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ মাপেন। সমতল পৃথিবীর ব্যাসার্ধ কি মাপা সম্ভব? বিশেষ করে, আল বিরুনী নিচের পদ্ধতি অবলম্বন করলে, নিশ্চয়ই সমতল পৃথিবীর ব্যাসার্ধ মাপা যেতো না।
দেখুনঃবিস্তারিতঃ
কিছু দুর্বল প্রশ্নের গুরুত্বপূর্ণ যৌক্তিক উত্তর
প্রশ্নঃ মুসলিমরা গ্রিকদের দ্বারা প্রভাবিত ছিল তাই সেখান থেকে কপি করে মুসলিমরা বলেছে দুনিয়া গোলাকার?
উত্তরঃ এটি ডাহা মিথ্যা কথা। আমার পূর্বের লেখাগুলোতে আগেই আমি বিশুদ্ধ যুক্তি দিয়ে প্রমান দিয়েছি নাস্তিক হতে হলে প্রথমে মিথ্যাবাদী হতেই হবে। যে নাস্তিক যতো বেশি কুরআন সুন্নাহ ভুল ব্যাখ্যা দিতে পারবে সে ততো বিশাল বিশুদ্ধ নাস্তিক!
সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী [রাহঃ] তার ‘ইসলামী জীবন ব্যবস্থা’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে, ইবনে তাইমিয়া তার সমকালীন যুগে তাফসীরকে গ্রীকদের প্রভাব থেকে রক্ষা করেছিলেন। আমার কথা হল, যেহেতু ইবনে তাইমিয়াকে মুসলিমরা একারনে স্মরণ করে যে, তিনি গ্রীকদের প্রভাব থেকে ইসলামকে বাচিয়েছেন, সেহেতু রক্ষাকারী নিজেই শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয় কি করে? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? সারা পৃথিবী ইসলামের বিপক্ষে চলে যাবে, কিন্তু ইবনে তাইমিয়া একা ইসলামের পতাকা উড্ডীন রাখবেন। এটা হল ইবনে তাইমিয়া। কখনও মিথ্যার ধার ধারেন না, আর কোথাকার গ্রীকদের কোন মূল্য তার কাছে নেই। আর ইবনে হাযম ও আবু ইয়ালা সম্পর্কে কি বলবেন? তারাও গ্রীক প্রভাবিত? অপযুক্তি আর কাকে বলে! আল্লামা জালাল উদ্দীন সূয়ুতি [রাহঃ] এর পূর্বে, মানে ৯১১ হিজরীর আগে কেউ পৃথিবী সমতল বলেছেন কিনা সন্দেহ।
তিনি (ইমাম ইবনে তাইমিয়া) গ্রীকদের বিরোধিতা করতেন এর প্রমাণ হল, ইবনে তাইমিয়া [রাহঃ] তার অসাধারণ রচনা ‘আল রিসালা আল আরশিয়াহ‘ গ্রন্থে নব্য-প্লেটোবাদী দার্শনিকদের যারা আল্লাহর আরশ নবম আকাশের গোলকে রয়েছে দাবি করে, তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। [মাজমু আল-ফাতওয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ৫৪৬] ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহ:) রচিত কিতাবের ইংরেজি অনুবাদ Against Greek Logicians শিরোনামে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছে। মোটকথা, উল্লিখিত সালাফদের ব্যাপারে গ্রীক প্রভাবিত তকমা দেয়া, নির্জলা অপবাদ ব্যতীত কিছুই নয়।
"মুসলিমরা গ্রিকদের থেকে কপি করেছে" প্রশ্ন হচ্ছে কোন মুসলিম কখন? কোন বই থেকে? কোন সময়ে? কবে? কোন গ্রিকদের থেকে? কপি করেছে এমন একটা চাক্ষুষ সাক্ষীর প্রমান নাস্তিকদেরকে দিতে হবে? প্রমানটি এমন হতে হবে অমুক লোক অমুক মুসলিমকে সরাসরি দেখছে গ্রিকদের থেকে কপি করে সাথে সাথে নিজের বইতে দাবি করে ফেলেছে, প্রমান করতে হবে?
অনেক নাস্তিক দাবি করে নবীজি (সা) এবং উনার সাহাবীগন নাকি বিলিভ করেন যে " পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা"। আমার প্রশ্ন হচ্ছ এমন একটা মাত্র বিশুদ্ধ হাদিস সমকামী নাস্তিকরা দেখাক যেখানে নবীজি (সা) অথবা উনার কোন সাহাবি নিজে দাবি করেছেন যে "আমি বিলিভ করি পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা"। সরাসরি প্রমান করুন?
প্রশ্নঃ কুরআনে পৃথিবীকে সরাসরি স্ফেরিক্যাল ও ঘূর্ণায়মান উল্লেখ না করার কারন কি ?
উত্তরঃ কুরআন সরাসরি সেটা বলা জরুরি মনে করে নি।যেহেতু কুরআনের ইশারাতে বুঝা যায় দুনিয়া গোলাকার সেহেতু বলা যায় যে সরাসরি গোলাকার বলা জরুরি না। আর বললেও বা কি হতো? সবাই এই সত্য মেনে নিত? কুরআনের হাজার হাজার অলৌকিক মোজেজা দেখেও ইসলামের শত্রুরা এসব হিংসাবশত মানতে চায় না সেখানে দুনিয়ার আকৃতি গোল এটা সরাসরি বললেই কি সবাই মুসলিম হয়ে যেত? বড় বড় সেলিব্রিটি কাফেররা নিজের চোখে চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত হতে দেখার পরেও ইসলাম গ্রহণ করেনি সেখানে এই কথা সরাসরি লেখা থাকলেও ওরা মানতো না। তবে যারা বুদ্ধিমান সত্যবাদী তারা কুরআনের ইশারা বুঝে তারাই ইসলামবিদ্বেষীদের ছেড়ে ইসলামকে গ্রহণ করে নেয় নাস্তিক্যধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম কে গ্রহণ করে নেয়।
প্রশ্নঃ অনেক অনুবাদে আরদ শব্দের অর্থ “পৃথিবী” আবার আরদ শব্দের অর্থ “ভূমি” বলা হয়েছে–এরকম কেন ?
উত্তরঃ পবিত্র কুরআনে “আরদ” শব্দটি ৪৬১ বার ব্যাবহার করা হয়েছে। উহার অধিকাংশ ব্যাবহার সমগ্র মহাবিশ্বের উপর আল্লাহ তা”লার চরম ক্ষমতার বিবরণ সংক্রান্ত এবং তাঁহার সৃষ্টিশক্তি সংক্রান্ত। কোন কোন স্থলে এই শব্দটি স্পষ্টই ব্যাবহার করা হয়েছে দেশ বা এলাকা বুঝাইতে । যেমনঃ সুরা আরাফ ৭:১১০ / সুরা ইব্রাহীম ১৪:১৩ / সুরা তাহা ২০:৫৭ / সুরা তাহা ২০:৬৩ / সুরা শুয়ারা ২৬:৩৫ / সুরা কাসাস ২৮:৫৭ । আবার অন্যত্র উপমা হিসাবে পার্থিব জীবন বুঝাইতে ব্যাবহার করা হয়েছে । যেমনঃ সুরা তওবা ৯:৩৮ ।
যে সকল আয়াতে ইহার আকৃতি ও প্রকৃতি বর্ণনা করিতে ব্যাবহার হইয়াছে তাহা দুই শ্রেণীর । এক শ্রেণীতে ইহা বর্ণিত হইয়াছে মিশ্রিত হইয়া অথবা পর্বত ও নদীর সহিত তুলনা করিতে গিয়া। এই স্থলে পৃথিবী মানুষের জন্য অন্যান্য প্রাণীর জন্য কিরুপ উপযুক্ত ও বাসযোগ্য তাহার উদাহরণের দেওয়া হইয়াছে । এখানে শ্রোতা অথবা পাঠক এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হইয়াছে তাহার প্রতি এবং প্রকৃতির সেই সকল বস্তুর প্রতি এবং ভূতলের প্রতি যাহা তাহার সম্মুখে দৃশ্যমান । অন্যভাবে যদি বলা যায় এই আরদ বা পৃথিবী বলিতে বুঝানো হইয়াছে ভুমি বা ভূপৃষ্ঠ যাহা দর্শকের সম্মুখে রহিয়াছে পর্বত ও নদীর, সমগ্র পৃথিবী নহে । দ্বিতীয় শ্রেণীর আয়াতে আরদ বা পৃথিবী শব্দটি সাধারনভাবে সূর্য, চন্দ্র , আকাশ এবং সমগ্র মহাবিশ্বের প্রেক্ষিতে রহিয়াছে। এখানে পৃথিবীকে একটি একক হিসাবে বলা হইয়াছে এবং বর্ণনায় ইহার আকৃতি সম্পর্কে , অবস্থান সম্পর্কে এমনকি মহাশুন্যে ইহার চলাচল সম্পর্কে ধারনা দেওয়া হইয়াছে। ……আরদের প্রকৃত অর্থ হইবে সম্মুখস্ত ভূমি, প্রান্তর বা মাটি।…… অধিকাংশ আয়াতে যে আরদ শব্দটি ব্যাবহার করা হইয়াছে তাহার অর্থ দর্শকের দৃষ্টিতে ভিতরে যে ভূপৃষ্ঠ তাহা, পৃথিবী নামক গ্রহ নহে ।
বিস্তারিত পড়ুনঃ সীরাতে বিশ্বকোষ, ৮ খণ্ড , পৃষ্ঠা ৩৪২ – ৩৪৪ । আরও বিস্তারিত জানতে সীরাতে বিশ্বকোষ, ৮ খণ্ড ৩৪২ থেকে ৩৬২ পৃষ্ঠা সম্পূর্ণ পাঠ করুন।
প্রশ্নঃ এমন কোন প্রমান আছে নবীজি (সা) বা উনার সাহাবিরা বলেছেন দুনিয়ায় গোলাকার?
উত্তরঃ আমার গবেষণায় আমি এমন তথ্য পাইনি। কেউ পেলে আমাকে অবশ্যই জানাবেন আমি খুশি হবো। আর আমি মনে করি এটা জরুরিও নয়। আর নবীজি (সা) কে দুনিয়াতে আল্লাহ পাঠিয়েছেন মানুষকে হেদায়েত করার জন্য দুনিয়ার শেইপ মানুষকে জানানোর জন্য নয়। একজন মানুষ যদি মানবিক এবং সত্য পথে চলে আর সে যদি দুনিয়ার শেইপ গোল এটা নাও জানে তারপরেও ক্ষতি হবে না।
পরিশেষে প্রশ্ন দিয়ে শেষ করবো, কুরআন থেকে পরোক্ষভাবে স্পষ্টই প্রমানিত যে কুরআন পৃথিবীকে গোলাকারই বলেছে কিন্তু নাস্তিকদের যুক্তি অনুপাতে যদি মুহাম্মদ (সা) কুরআন লিখেই থাকেন তাহলে তিনি এতো প্রাচীন হয়ে কিভাবে এই সঠিক তথ্য জানতে পারলেন? যদি বলেন কপি করেছে তাহলে কপি করেছে এমন চাক্ষুষ সাক্ষীর মজবুত প্রমাণ দিন? এবং সেটা কিভাবে বিশ্বাসযোগ্য সেটার প্রমান দিন? নবীজি (সা) কবে? কোন বই থেকে? কার থেকে? কপি করেছিল? যদি বলেন সাহাবীদের থেকে জেনেছে তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে সেই সাহাবীর নাম কি? সেই সাহাবী কিভাবে শিওর হলেন যে এটাই সত্য? কার থেকে জেনেছে? কবে? কোথায়? কোন সময়? জেনেছে? কপি করে থাকলে সব গুলা কেন করেন নাই? অল্প অল্প কেন করেছেন? নাস্তিকদের যুক্তি অনুপাতে।