বনু কুরাইজা বাসীদের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে নবী মোহাম্মদ (সা) অমানবিক কাজ করেছেন?


🔴প্রশ্নঃবনু কুরাইজা বাসীদের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে নবী মুহাম্মদ (সা) অমানবিক কাজ করেছেন?
✍লিখেছেনঃ এমডি আলী।
✅উত্তরঃকেউ যদি আপনাকে প্রশ্ন করে নারীপাচারকারীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া কি অমানবিক কাজ? দুর্নীতিবাজদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া কি অমানবিক? দেশদ্রোহীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া কি অমানবিক?ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া কি অমানবিক কাজ?এসব প্রশ্ন থেকে দুটো দিক প্রকাশ পায়। একটি হলো হয়ত যেই লোক প্রশ্নটি করেছেন সে মূর্খ,মানবিক আর অমানবিক বিষয় বিন্দুমাত্র জ্ঞান তার নেই। দ্বিতীয় দিক হলো সে নারীপাচারকারী,দুর্নীতি,দেশদ্রোহীতা,ধর্ষকের মত ভয়াবহ অপরাধকে সমর্থন করতে চাচ্ছে।
আপনি যদি বিবেকবান মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই বুঝতে পারবেন যে ভয়ংকর অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া মোটেও অমানবিক কাজ নয় বরং মানবতার শ্রেষ্ঠ মানবিক কাজ।
ঠিক একইভাবে বনু কুরাইজাবাসীদের মত জঙ্গি সন্ত্রাসীদের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে নবীজি (সা) এবং উনার সম্মানিত সাহাবীরা শ্রেষ্ঠ মানবতার কাজটিই করেছেন। এই সত্যকথা জানার পরেও যখন নাস্তিক্যধর্মের অন্ধবিশ্বাসীরা ইচ্ছা করে বলে নবী মুহাম্মদ (সা) বনু কুরাইজাদের গনহত্যা করে অন্যায় কাজ করেছেন তখন আর আমাদের বুঝতে বাকি নেই যে নাস্তিকরা আসলে পরক্ষভাবে সন্ত্রাসী বাহিনীদের সমর্থন করে যাচ্ছে যারা কিনা মানবতার আসল চরম শত্রু। কমিউনিস্ট নাস্তিকদের ইতিহাস চেক করলে জানতে পারবেন নাস্তিকরা কতটা রক্তপিপাসু ছিল ক্ষমতা পাওয়ার পর।
আমি আজকে সরাসরি রেফারেন্স দিয়ে সব সত্য তথ্য প্রকাশ করে দিব যা নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাসে ফাটল ধরাবে। ছোটবেলায় আয়োডিনের অভাবে ভুক্তভোগী নাস্তিকরা আমার লেখা পড়া সহ্যই করতে পারে না। কেন জানেন? কারন আমি এমন সব লুকানো সত্য তথ্য আমার লেখায় যুক্ত করি যার ফলে নাস্তিকরা সরলমনা মানুষদের ধোঁকা দিতে পারে না, প্রতারণা করতে পারে না।
📢উগ্রপন্থী বনু কুরাইজা সন্ত্রাসীদের ভয়ংকর অপরাধের প্রমান যা নাস্তিকরা লুকিয়ে রাখতে চায়ঃ
👉*নাসরুল বারী শরহে সহিহ আল বুখারী, বাংলা, ৮ খণ্ড,১৯৮ পৃষ্ঠা।মূলঃশায়খুল হাদিস মাওলানা মোঃ উসমান গনী।অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ মাও নোমান আহমদঃ রাসুল (সা) ও বনু কুরাইজার মাঝে আগে থেকেই চুক্তি ছিল।কুরাইজারা ১০ হাজারের সৈন্যবাহিনী নিয়ে মদীনায় আক্রমণ চালানোর জন্য আসলে, বনু কুরাইজা রাসুল (সা)এর সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করে।রাসুল (সা)এর সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করে কুরাইশদের সাথে মিলে যায়।
👉*তাফসীরে আহসানুল বয়ান, ৭২৯ পৃষ্ঠা। মূলঃ মাওলানা সালাহুদ্দীন ইউসুফ।৭ জন শায়েখ মিলে এই তাফসীরটি অনুবাদ করেন।সম্পাদনা করেছেন আবুল হামীদ মাদানী,ইসলামিক সেন্টার আল মাজমাআহ সউদি আরব। -> (সুরা আহযাব ৩৩:৯) উক্ত আয়াত সমূহে ৫ম হিজরীতে সংঘটিত আজযাব যুদ্ধের কিছু বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।এই যুদ্ধকে ‘আহযাব’ এই জন্য বলা হয় যে এই সময় ইসলামের সকল শত্রুবাহিনী একত্রিত হয়ে মুসলিমদের ঘাটি মদীনার উপর আক্রমণ করেছিল। ‘আহযাব’ ‘হিযব’ শব্দের বহুবচন, যার অর্থ বাহিনী বা দল।একে খন্দকের যুদ্ধও বলা হয়,কারন মুসলিমগণ নিজেদের নিরাপত্তার জন্য মদীনার একপাশে খাল খনন করেন।যাতে শত্রুবাহিনী মদীনা শহরের ভিতর প্রবেশ করতে না পারে। খন্দক মানে খাল বা পরিখা।উক্ত যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এইরূপ যে,ইহুদী গোত্র বনু নাযীর যাদেরকে বার বার অঙ্গীকার ভঙ্গ করার ফলে রাসুল (সা) মদীনা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন।তারা খয়বারে গিয়ে বসবাস শুরু করে।তারা মক্কার কাফেরদেরকে মুসলিমদের উপর আক্রমণ করার জন্য তৈরি করলো।অনুরূপ গাতফান ইত্যাদি গোত্র নাজদের গোত্রগুলোকে সাহায্যের আশ্বাস গিয়ে লড়াইয়ের জন্য উদ্ধুদ্ধ করল।সুতরাং ইহুদীরা অনায়াসে ইসলাম ও মুসলীমদের সকল শত্রুদেরকে একত্রিত করে মদীনার উপর আক্রমন করতে সফল হল। মক্কার মুশরিকদের কমান্ডার ছিল আবু সুফিয়ান।সে উহুদ পর্বতের আশেপাশে শিবির স্থাপন করে পুরো মদীনাকে পরিবেষ্টন করে নিল।তাদের সম্মিলিত বাহিনীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ হাজার,আর মুসলিমগণ ছিলেন মাত্র ৩ হাজার।এ ছাড়াও মদীনার দক্ষিন দিকে ইহুদীদের তৃতীয় গোত্র বনু কুরাইজা বাস করত।যাদের সাথে সেই সময় পর্যন্ত মুসলিমদের চুক্তি ছিল এবং তারা মুসলিমদের সাহায্য করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল।কিন্তু বনু নাযীরের ইহুদী সর্দার হুয়াই বিন আখতাব মুসলিমদেরকে সমুলে ধ্বংস করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদেরকে ফুসলিয়ে নিজেদের সাথে করে নিল।এদিকে মুসলিমগণ সর্বদিক দিয়ে শত্রুবাহিনীর পরিবেষ্টনে পড়ে গেলেন।সেই সংকটাবস্থায় সালমান ফারসী (রা) এর পরামর্শে পরিখা খনন করা হল।যার ফলে শত্রুবাহিনী মদীনার বাইরেই থাকতে বাধ্য হল।তারপরেও মুসলিমগণ সেই পরিবেষ্টন ও সম্মিলিত শত্রুবাহিনীর আক্রমণের ভয়ে ভীত ছিলেন। প্রায় একমাস যাবৎ এই পরিবেষ্টনে মুসলিমগণ কঠিন ভয় ও দুশ্চিন্তায় কালাতিপাত করেন।
👉* অধ্যাপক এ কে এম নাজির আহমদ লিখিত “আদর্শ মানব মোহাম্মদ (সা)” আহসান পাবলিকেশন, ৪২ নং পৃষ্ঠায়ঃ বনু নুদাইর মদীনা থেকে চলে যাবার কালে বনু কুরাইজার ইহুদীরা নতুনভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়ে মদীনায় থাকাই পছন্দ করে।আল্লাহর রাসুল (সা) তাদেরকে সেই সুযোগ করে দেন।আহযাব যুদ্ধের সময় বাইরের ইহুদী গোত্রগুলোর পরামর্শে বনু কুরাইজা কুরাইশদের সাথে মিলিত হয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।তাঁরা মুসলিমদের সাথে সম্পাদিত চুক্তির কোন তোয়াক্কাই করলো না।আহযাব যুদ্ধ শেষে এই বিশ্বাসধাতকদেরকে শায়েস্তা করার জন্য মুসলিমরা বনু কুরাইজার দুর্গ অবরোধ করেন।এই অবরোধ প্রায় একমাস স্থায়ী হয়।অবশেষে মুসলিমরা ইহুদীদের প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা ভাংগতে সক্ষম হন।এই গোত্রের অপরাধী যোদ্ধাদেরকে হত্যা করা হয় ও বাকীদেরকে বন্দী করে রাখা হয়।এইভাবে ষড়যন্ত্রকারী ইহুদী খতম হয়।
👉* মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা) এর জীবনচরিত;আসাহহুস সিয়ার।লিখেছেনঃহযরত মাওঃ হাকীম আবুল বারাকাত আবদুর রউফ দানাপুরী (রহ)। ভাষান্তরঃ মাওঃ আ.ব.ম.সাইফুল ইসলাম। ৮০,৮১ পৃষ্ঠা আর সহজ ইন আমুলবারী;শরহে বুখারী (মাগাযী ও তাফসীর অংশ) ১৩৯ পৃষ্ঠাঃ তাদের ঘটনা এই যে ইহুদীরা মুসলমানদের ধ্বংস সাধনের জন্য এক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে। সেমতে তাদের বড় বড় নেতা সাল্লাম ইবনে আবুল হুকায়ক,সাল্লাম ইবনে মিশকাম ও কিনানা ইবনুর রাবী আরবের সমস্ত গোত্রে ঘুরে ঘুরে তাদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে।তারা কুরাইশ,বনু সুলায়ম,গাতফান,বনু আসাদ,আশজা,ফাযারা ও বনু মুররা সহ সকল গোষ্ঠীকে একযোগে মদীনায় হামলা করার জন্য প্রস্তুত করে ফেললো। মহানবী (সা) সাহাবায়ে কিরামকে নিয়ে পরামর্শ করলেন।সিদ্ধান্ত হলো যে মদীনার ভেতরে থেকে তাদেরকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না।তাই নারী ও শিশুদেরকে মদীনায় রেখে বাইরে নিয়ে যুদ্ধ করতে হবে।সেমতে সকল পুরুষ সালা পর্বতের পাদদেশে সমবেত হলো।পর্বতকে পেছনে রেখে সম্মুখ দিকে পরিখা খনন করা হলো।মুসলিম জনগণ পরিখার এ পাশে অবস্থান করলো আর শত্রু সৈন্যরা এসে পরিখার ওপারে শিবির স্থাপন করলো।মুসলিম বাহিনী পরিখার এ পাশে স্বেচ্ছা অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় খবর এলো,বনু কুরাইজা চুক্তি বাতিল ঘোষণা করেছে।তারা হুয়াই ইবনে আখতাবের ফুসলানিতে পড়ে কাফিরদের সংগে একাত্ম হয়ে গেছে।এ সংবাদ পেয়ে মুসলিমগণ বিচলিত হয়ে পড়লো।কেননা মদীনায় নারী ও শিশুদের রেখে আসা হয়েছে।অর্থ সম্পদ সব সেখানে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।কেবল অন্ধ সাহাবী হযরত ইবনে উম্মু মাখতুম (রা) কে খলিফা হিসেবে রেখে আসা হয়েছে।তাদের হেফাযতের কোনও ব্যাবস্থা ছিল না।পুরুষেরা সকলে এখানে অবরুদ্ধ।অপরদিকে বনু কুরাইজা মদীনার সন্নিকটেই অবস্থান করতো।তাই যে কোন সময় তাদের পক্ষ হতে আক্রমণের আশংকা ছিল।বনু কুরাইজা প্রকৃতই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে কিনা তা অনুসন্ধান করে দেখার জন্য মহানবী (সা) হযরত সাদ ইবনে মুয়াজ (রা) ও খাওওয়াত ইবনে জুবায়র (রা) প্রমুখকে প্রেরণ করলেন।তারা এসে যখন জানালেন খবর সঠিক, তখন তিনি বনু হারিছার কজন যুবককে মদীনায় পাঠিয়ে দিলেন।তথাপি মুসলিমগণ উদ্বেগের ভেতর ছিল।
👉* আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী লিখিত, খাদিজা আখতার রেজায়ীর অনুবাদকৃত "আর রাহীকুল মাখতুম" এর ৩৪৮ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে, বনু কুরাইজা মুসলমানদের জীবন ক্লান্তিলগ্নে যে ভয়াবহ বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল সেটা তো ছিলোই এছাড়া মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারুক না পারুক তারা ছিল বদ্ধপরিকর । মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যাবহার করার জন্য তারা দেড় হাজার তলোয়ার, দুই হাজার বর্শা, তিনশত বর্ম এবং পাঁচশত ঢাল মজুদ করে রেখেছিল। বিজয়ের পর মুসলমানরা সেসব অস্ত্র উদ্ধার করেন । ......... এরা মুসলমানদের সাথে পাকাপোক্ত অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছিল । মুসলমানদের নির্মূল করার জন্য তারা নাযুক সময়ে শত্রুদের সাথে সহযোগিতা করে মারাত্মক যুদ্ধাপরাধ করেছিল । মৃত্যুদণ্ডই ছিল এ গুরুতর অপরাধের একমাত্র সাজা। তাদের প্রতি কোনই অবিচার করা হয়নি।
👉* আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী লিখিত, খাদিজা আখতার রেজায়ীর অনুবাদকৃত "আর রাহীকুল মাখতুম" এর ৩৪৫ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে, হযরত আলী (রা) বনু কোরায়যার দুর্গের কাছে পৌছার পর সেই গোত্রের ইহুদীরা আল্লাহর রাসুলকে গালাগাল দিতে শুরু করলো। আল্লাহর রাসুল কিছুক্ষণ পরই মোহাজের ও আনসার সাহাবাদের সাথে নিয়ে সেখানে হাযির হলেন । প্রথমে তিনি আনা নামক একটি জলাশয়ের কাছে থামলেন। মুসলমানরাও যুদ্ধের ঘোষণা শুনে বনু কুরাইজা গোত্র অভিমুখে রওয়ানা হলেন।
👉* ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত "তাফসীরে ইবনে কাসীর" ১৫ খণ্ড, ৭৬৭ পৃষ্ঠা = সুতরাং রাসুল (সা) কে হত্যা ও তাঁর দ্বীনকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা ইত্যাদি সব কিছুই তারা করেছে ।
👉* মদিনা সনদের একটি দ্বারার মধ্যে এই চুক্তি ছিল যে মদিনাতে বাইরের শত্রু আক্রমণ করলে মোকাবেলায় সবাই এক থাকবে । রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া কেউ গোপনে চুক্তি করতে পারবে না কিন্তু এই দুটি চুক্তিই বনু কুরাইজা ভঙ্গ করে বরং তারা মক্কার কাফেরদের সাথে এক ছিল এবং মুসলিমদের ধ্বংস করতে চাইত তারা । ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত "তাফসীরে ইবনে কাসীর" ১৫ খণ্ড, ৭৬৯ পৃষ্ঠা = যখন মুশরিক ও ইহুদীদের সেনাবাহিনী মদীনায় আসে ও অবরোধ সৃষ্টি করে তখন বনু কুরাইযা গোত্রের ইহুদীরা যারা মদীনার অধিবাসী ছিল এবং যাদের সাথে রাসুল (সা) এর চুক্তি হয়েছিল তারাও ঠিক এই সময়ে বিশ্বাসঘাতকতা করলো এবং সন্ধি ভেঙে দিলো । তারা চোখ রাঙাতে শুরু করলো ।
👉* তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন, ৩ খণ্ড, ৭৬ পৃষ্ঠা = বনু কুরাইজা ছিল ইহুদীদের একটি গোত্র । এ গোত্রটি মহানবী (সা) এর সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য চুক্তিবদ্ধ ছিল । কিন্তু আহযাবের যুদ্ধকালে তারা চুক্তি ভঙ্গ করে হানাদারদের সাথে চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছিল এবং তারা পিছন দিক থেকে মুসলিমদের উপর আঘাত হানার পরিকল্পনা করেছিল । সঙ্গত কারনেই আহযাবের যুদ্ধ শেষ হওয়া মাত্র মহানবী (সা) আল্লাহর হুকুমে তাদের উপর আক্রমন চালান ।
👉* আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ) লিখিত "সীরাতুল মুস্তফা (সা)" ২৭৮ পৃষ্ঠাঃ হযরত আনাস (রা) বলেন বনু কুরাইজা এবং রাসুল (সা)এর মধ্যে পারস্পারিক চুক্তি পূর্বে থেকেই বিদ্যমান ছিল। যখন কুরাইশরা ১০ হাজার সৈন্য নিয়ে মদীনা আক্রমন করতে আসে, তখন বনু কুরাইজা রাসুল (সা) এর সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করে কুরাইশদের সাথে গিয়ে মিলিত হয় ।
👉* আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ) লিখিত "সীরাতুল মুস্তফা (সা)" ২৭৯ পৃষ্ঠাঃ রাসুল (সা) হযরত আলী (রা) কে ইসলামের ঝাণ্ডাসহ রওয়ানা করলেন । হযরত আলী (রা) যখন সেখানে পৌঁছলেন তখন ইহুদীরা নবী করীম (সা) কে প্রকাশ্যে এমনভাবে গালি দেয় যা ক্ষমার অযোগ্য একটি অপরাধ।
👉* উগ্র সন্ত্রাসীরা নবী মুহাম্মদ (সা) সহ পুরা মদীনা ধ্বংস করতে চেয়েছিল এবং এদের সাথে যুক্ত হয়েছিল বনু কুরাইজার লোকেরা । আসাদুল্লাহ আল গালিব লিখিত "সীরাতুর রাসুল (সা)" ৪১৮ পৃষ্ঠায় যুদ্ধের কারন বিস্তারিত পড়ুন।
👉* মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ (হাঃফি)বলেনঃ বনু কুরাইযার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে হিজরী ৫ম সনের শেষ দিকে। আর মদীনা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রথম হিজরীতে। এ পাঁচ বছর বনু কুরাইযার লোকজন মুসলমানদের মতো একই সুযোগ-সুবিধা নিয়েই মদীনায় বসবাস করেছে। বরং বিভিন্ন সময়ে মুসলমানদের মদীনা রক্ষার জন্য জিহাদ করতে হলেও তাদেরকে তা করতে হয়নি। কিন্তু মদীনার অন্যান্য ইয়াহুদী গোত্রের মতো বনু কুরাইযার লোকজনও রাষ্ট্রের দেওয়া নিরাপত্তা ও শান্তির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে চরম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা ঐতিহাসিক খন্দক যুদ্ধের সময় কাফেরদের বহুজাতিক বাহিনীতে অংশগ্রহণ করে আল্লাহর নবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। বনু কুরাইযার সর্দার শুধু নিজেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়নি; বরং অন্য গোত্রের লোকদেরও এ হীন ষড়যন্ত্রের অংশিদার করেছে। তারা মনে করেছিল, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবার অবশ্যই কাফের-মুশরিকদের কাছে পরাজিত হবেন। তাই এই গোপন আঁতাত তাদেরকে পরবর্তীতে কাফেরদের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি বা তাদের নৈকট্য লাভের সুযোগ করে দিবে। এ কাজটি ছিল তাদের সাথে কৃত চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, গুপ্তচরবৃত্তি, রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং দীর্ঘ ৫ বছর থেকে ইসলামী রাষ্ট্রের দেওয়া শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
🌋জঙ্গি সন্ত্রাসী বনু কুরাইজা গোত্র তাদের অপরাধ স্বীকার করে নেয় এবং তাদের শাস্তি কে দিবে সেটাও তারাই ঠিক করে দেয়ঃ
🎞* ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত "তাফসীরে ইবনে কাসীর" ১৫ খণ্ড, ৭৭১ পৃষ্ঠা = বনু কুরাইজা গোত্র স্বীকার করে নিয়েছে যে, হযরত সাদ (রা) তাদের যে মিমাংসা করবেন তা তারা মেনে নেবে এবং তাদের দুর্গ মুসলিমদের হাতে সমর্পণ করবে । রাসুল (সা) হযরত সাদ (রা) এর নিকট সংবাদ পাঠালেন যে, তিনি যেন এসে তাদেরকে তাঁর ফয়সালা শুনিয়ে দেন ।
🎞* তাফসীরে ইবনে কাসীর" ১৫ খণ্ড, ৭৭২ পৃষ্ঠা = হযরত সাদ (রা) বললেন ! তাহলে এখন আমার ফয়সালা শুনুন ! বনু কুরাইজার মধ্যে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার মত যত লোক রয়েছে তাদের সবাইকেই হত্যা করে দেয়া হবে । তাদের শিশু সন্তানদের বন্দী করা হবে এবং তাদের ধন সম্পদ মুসলিমদের অধিকারভুক্ত হবে।
🕵নিরপরাধ কাউকেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়নি শুধুমাত্র যারা সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদের সাথে একতা পোষণ করেছিল বা গোটা মুসলিম জাতিকে ধ্বংস করার জন্য প্রস্তুত ছিল তাদেরকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেয়া হয় আর যারা নিরপরাধ ছিল তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়ঃ
⏩ইবনে হিশাম (রহ) লিখিত সীরাতুন নবী (সা) এর ৩ খণ্ড, ২৩৫ পৃষ্ঠাঃ... বনু কুরাইজা যে রাতে রাসুল (সা) এর নির্দেশমত দুর্গ হতে নেমে এসে আত্মসমর্পণ করে,সে রাতে সালাবা ইবন সায়া,উসায়দ ইবনে সায়া ও আসাদ ইবনে উবায়দা ইসলাম গ্রহন করেন।তাঁরা বনু কুরাইজা বা বনু নাযীর গোত্রের লোক ছিলেন না।তাঁরা ছিলেন বনু হাদল গোত্রের লোক।উক্ত গোত্রদ্বয়ের আরও উপর থেকে তাদের বংশদ্বারা নেমে এসেছে। উভয়ের ঊর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ এক।
⏩Ihadis.com, সহিহ মুসলিম, হাদিসঃ৪৪৮৭,৪৪৮৯, সহিহ হাদিসঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃবানূ কুরাইযার অবরুদ্ধ লোকেরা সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ)-এর নির্দেশ মেনে নিতে সম্মত হলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সা’দ (রাঃ)-এর নিকট লোক পাঠালেন। সুতরাং তিনি একটি গাধার উপর আরোহণ করে আসলেন। যখন তিনি মাসজিদের কাছাকাছি আসলেন তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারদের বললেনঃ তোমরা তোমাদের নেতার অথবা বললেন, উত্তম ব্যক্তির দিকে উঠে যাও। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ সমস্ত অবরুদ্ধ দুর্গবাসীরা তোমার নির্দেশ মান্য করতে সম্মত হয়েছে। তখন তিনি বললেন, তাদের মধ্যেকার যুদ্ধের উপযুক্ত (যুবক) লোকদেরকে হত্যা করা হোক এবং তাদের নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করা হোক। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী বিচার করেছো। বর্ণনাকারী কখনো বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি রাজাবিরাজ আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী বিচার করেছ। বর্ণনাকারী ইবনু মুসান্না (রহঃ) কোন কোন সময় তিনি বলেছেনঃ ‘তুমি রাজাধিরাজ আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী বিচার করেছো’ কথাটি উল্লেখ করেননি।
⏩ihadis.com, তিরমিজি, হাদিসঃ১৫৮৪, সহিহ হাদিসঃ আতিয়্যা আল-কুরাযী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমাদেরকে বানূ কুরাইযার যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আনা হল। যাদের লজ্জাস্থানের লোম উঠেছে (বালেগদের) তাদেরকে হত্যা করা হল, আর যাদের তা উঠেনি (নাবালেগদের) তাদেরকে মুক্ত করে দেওয়া হল। আমার লজ্জাস্থানে তখনও লোম উঠেনি। একারণে আমাকে মুক্ত করে দেওয়া হল।
⏩আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী লিখিত, খাদিজা আখতার রেজায়ীর অনুবাদকৃত "আর রাহীকুল মাখতুম" এর ৩৪৯ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে, বনু কুরাইজার একজন মহিলাকে হত্যা করা হয় কারন ঐ মহিলা ইবনে ছুয়াইদের উপর গম পেশাইর চাক্কি ছুড়ে তাকে হত্যা করেছিল । সেই হত্যার বদলে তাকেও শাস্তি স্বরূপ হত্যা করা হয় । আল্লাহর রাসুল আদেশ দিয়েছিলেন যে, যার নাভির নিচে চুল গজিয়েছে তাকে যেন হত্যা করা হয় । আতিয়া কারাযির নাভির নিচে তখনো চুল গজায়নি, এ কারনে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল । পরে তিনি ইসলামের ছায়াতলে এসে জীবন ধন্য করেছিলেন ।
⏩আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী লিখিত, খাদিজা আখতার রেজায়ীর অনুবাদকৃত "আর রাহীকুল মাখতুম" এর ৩৫০ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে, সেই রাতে অস্ত্র সমর্পণের পরে বনু কুরাইজার কয়েকজন ইসলাম গ্রহণ করে । এতে তাদের সর্বচ্চ সবাইকে নিরাপত্তা দেয়া হয় । সেই রাতে আমর নামের এক লোক বেরিয়ে আসে যে বনু কুরাইজার বিশ্বাসঘাতকতায় যোগদান করেনি । প্রহরীদের নেতা হযরত মোহাম্মদ ইবনে মোসলামা (রা) তাকে চিনতে পারেন ও ছেড়ে দেন । পরে এই লোকটি নিরুদ্ধেশ হয়ে যায় । তার আর কোন খবর পাওয়া যায়নি।
⏩ihadis.com, তিরমিজি, হাদিসঃ১৫৮২, সহিহ হাদিসঃ জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, সা’দ ইবনু মুআয (রাঃ) আহ্‌যাব যুদ্ধের দিন তীরবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এতে তার বাহুর মাঝখানের রগ কেটে যায়। তার ক্ষতস্থানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগুনের সেঁক দিয়ে রক্তক্ষরণ বন্ধ করেন। তারপর তার হাত ফুলে যায়। আগুনের সেঁক দেওয়া বন্ধ করলে আবার রক্তক্ষরণ হতে থাকে। আবার তিনি তার ক্ষতস্থানে আগুনের সেঁক দেন। তার হাত পুনরায় ফুলে উঠে। তিনি (সা’দ) নিজের এ অবস্থা দেখে বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমার জীবনকে কেড়ে নিও না বানূ কুরাইযার চরম পরিণতি দেখে আমার চোখ না জুড়ানো পর্যন্ত। ” তার জখম হতে সাথে সাথে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে গেল। এরপর আর একটি ফোঁটাও বের হয়নি। সা’দ ইবনু মুআয (রাঃ)-কে তারা (বানূ কুরাইযা) সালিশ মানতে রাজী হয়। তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) তার (সা’দের) নিকট লোক পাঠালেন (সমাধানের জন্য)। তিনি সমাধান দিলেন যে, বানূ কুরাইযা গোত্রের পুরুষদেরকে মেরে ফেলা হবে এবং মহিলাদেরকে বাঁচিয়ে রাখা হবে। মুসলমানগণ তাদের দ্বারা বিভিন্ন রকম কাজ আদায় করতে পারবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাদের ব্যাপারে তোমার মত সম্পূর্ণ আল্লাহ্ তা’আলার মতের অনুরূপ হয়েছে। তারা (পুরুষগণ) সংখ্যায় ছিল চার শত । লোকেরা তাদেরকে মেরে ফেলা সমাপ্ত করলে, তার ক্ষতস্থান হতে আবার রক্ত পড়া আরম্ভ হল এবং তিনি মৃত্যু বরণ করলেন।
⏩*রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে বললেন, ‘হে সা‘দ! এ সব লোকজন আপনার মীমাংসার উপর আস্থাশীল হয়ে আত্মসমর্পণ করেছে।’সা‘দ বললেন, ‘আমার মীমাংসা কি এদের উপর প্রযোজ্য হবে?’জবাবে লোকেরা বলল, ‘জী হ্যাঁ’। তিনি বললেন, ‘মুসলিমগণের উপরেও কি?’লোকেরা বলল, ‘জী হ্যাঁ’।তিনি আবারও বললেন, ‘এখানে যাঁরা উপস্থিত রয়েছেন তাদের উপরেও কি তা প্রযোজ্য হবে?’ তাঁর ইঙ্গিত ছিল রাসূলুল্লাহ (সাঃ)’র অবতরণ স্থানের দিকে, কিন্তু সম্মান ও ইজ্জতের কারণে মুখমন্ডল ছিল অন্যদিকে ফেরানো। প্রত্যুত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘হ্যাঁ, আমার উপরেও হবে।’সা‘দ বললেন, ‘তাহলে তাদের সম্পর্কে আমার বিচারের রায় হচ্ছে এই যে, পুরুষদের হত্যা করা হোক, মহিলা ও শিশুদের বন্দী করে রাখা হোক এবং সম্পদসমূহ বন্টন করে দেয়া হোক।’রাসূলুল্লাহ (সাঃ)‏বললেন) ‘আপনি তাদের ব্যাপারে ঠিক সেই বিচারই করেছেন যেমনটি করেছেন আল্লাহ তা‘আলা সাত আসমানের উপর।’সা'দের এ বিচার ছিল অত্যন্ত ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক। কারণ, বনু কুরাইযা মুসলিমগণের জীবন মরণের জন্য অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতিতে যা করতে চেয়েছিলেন তা ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ ও বিভীষিকাময়। অঙ্গীকার ভঙ্গের একটি জঘন্য অপরাধও তারা করেছিল। অধিকন্তু, মুসলিমগণকে নিঃশেষ করে ফেলার জন্য তারা দেড় হাজার তরবারী, দুই হাজার বর্শা, যুদ্ধে ব্যবহারোপযোগী তিন শত লৌহবর্ম এবং পাঁচ শত প্রতিরক্ষা ঢাল সংগ্রহ করে রেখেছিল। পরবর্তী কালে সেগুলো মুসলিমগণের অধিকারে আসে।- https://hadithbd.com/books/link/?id=6295
🎩অমুসলিম পণ্ডিতদের চোখে বনু কুরাইজা ইহুদী সন্ত্রাসীদের শাস্তিঃ
🚥আর.ভি.সি. বোদলে এই ঘটনার ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে লিখেছেন— “মুহাম্মাদ স. আরবের সে দেশে একা ছিলেন। এই দেশটি আয়তনের বিচারে মার্কিন যুক্তরাষ্টের তিনভাগের একভাগ এবং এর জনবসতি পঞ্চাশ লাখ। তাদের কাছে এমন বাহিনীও ছিল না, যা লোকজনকে আদেশ পালন ও আনুগত্যের জন্যে বাধ্য করতে পারে; শুধু একটিমাত্র সংক্ষিপ্ত সেনাদল ছাড়া, যার সৈন্যসংখ্যা ছিলো তিন হাজার। এই সেনাদলও সম্পূর্ণ অস্ত্রসজ্জিত ছিল না। এদিক বিবেচনায় মুহাম্মাদ যদি এক্ষেত্রে শৈথিল্য ও উদাসীনতার প্রশ্রয় দিতেন এবং বনি কুরাইজাকে তাদের চুক্তিভঙ্গের কারণে কোনোরূপ শাস্তি দেওয়া ছাড়াই ছেড়ে দিতেন, তবে জাযিরাতুল আরবে ইসলামের টিকে থাকা দুষ্কর হতো। সন্দেহ নেই যে, ইহুদিদের হত্যার বিষয়টি বেশ কঠোর ছিল। কিন্তু এটা ধর্মের ইতিহাসে কোনো আজনবি ও নতুন ঘটনা ছিল না এবং মুসলিমদের প্রেক্ষাপটে এ কাজের পূর্ণ বৈধতা বিদ্যমান ছিল। এর ফলে অন্যান্য আরব গোত্র ও ইহুদি গোষ্ঠী কোনোরূপ চুক্তিভঙ্গ ও বিশ্বাসঘাতকতা করার পূর্বে বারবার ভাবতে বাধ্য হয়। কেননা, তারা এর করুণ পরিণতি দেখে নিয়েছিল, নিজ চোখে চাক্ষুস করেছিল, মুাহম্মাদ তার সিদ্ধান্ত কার্যকর করার শক্তি রাখেন। - (‘দ্য মেসেঞ্জার : দ্য লাইফ অব মুহাম্মাদ, লন্ডন ১৯৪৬, পৃষ্ঠা ২২০)
🚥স্যার স্ট্যানলি লেনপুল লিখছেন— “এটা স্মরণ রাখা উচিত যে, তাদের অপরাধ ছিল রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা এবং তা-ও একটি অবরোধের মধ্যবর্তী সময়ে। যারা ইতিহাসে এটা পড়েছে যে, ওয়েলিংটনের সেনাদল যে পথ ধরে যেত, তাকে চিনিয়ে দিত পলাতক সৈন্য ও লুটেরাদের লাশগুলো; যেগুলো গাছে ঝুলানো থাকত—সেখানে তাদের একটি বিশ্বাসঘাতক গোত্রের লোকদের একটি সাধারণ সিদ্ধান্তর বিচারে হত্যা করা নিয়ে আশ্চর্য হওয়া অসঙ্গত। ------- (Selection From The Koran Indro. P. LXV)
🚥ড. ইসরাঈল অলফিনসন বনি কুরাইজা যুদ্ধ পর্যালোচনা করতে গিয়ে সেই বাস্তবতার স্বীকারোক্তি এমন শব্দে দিয়েছেন— মোনাফেকদের সম্পর্ক যদ্দূর, তাতে বনি কোরাইজা যুদ্ধের পর তাদের আওয়াজ স্তিমিত হয়ে আসে এবং এরপর তাদের কথা ও কাজে এমন কিছু প্রকাশ পায় নি, যা নবীজি স. ও তার সাহাবিদের সিদ্ধান্তের বিপরীত হবে; যেমনটি এর আগে সম্ভাবনা ছিল।- (‘আল-ইয়াহূদ ফি বিলাদিল আরব’, পৃষ্ঠা ১৫৫।)
🤔আমার মুক্তমনা প্রশ্নঃ
১/ বনু কুরাইজার লোকেরা সন্ত্রাসী ছিল তাহলে নাস্তিকরা কেন তাদেরকে সমর্থন করে? কেননা নাস্তিকদের প্রশ্ন শুনলে মনে হয় নবী মুহাম্মদ (সা) সেই সন্ত্রাসীদের হত্যা করে অন্যায় করেছে?
২/ বনু কুরাইজাবাসীরা মুসলমানদের প্রথমেই ধ্বংস, হত্যা করতে চেয়েছিল এটি কেন নাস্তিকরা সমর্থন করে অথবা এটি কি মানবিক নাস্তিকদের কাছে? নাস্তিক্যধর্ম অনুপাতে কখন হত্যা করা বৈধ আর কখন হত্যা করা অবৈধ? এই নীতিমালা আসলে কে পেশ করবে?
৩/ ধরুন আপনি একটি দেশের সরকার । আর আপনি নাস্তিক্যধর্মে বিশ্বাস করেন । ধরুন মায়ানমারের বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা আপনার নাস্তিক দেশের উপর হামলা করার চিন্তা করছে শুধু তাই নয় বরং অস্ত্র,গোলাবারুদ,কামান সব রেডি করে রেখেছে-এই মুহূর্তে আপনি কি করবেন এবং কেন করবেন? কিভাবে করবেন ? আপনি কি আপনার জাতিকে রক্ষা করবেন, না নাকি বলবেন সন্ত্রাসীদের হামলার পাল্টা হামলা করা অমানবিক ? আপনি আসলে কি কি করবেন?
৪/ বনু কুরাইজা জঙ্গি সন্ত্রাসী গোত্র ছিল তাই এদেরকে হত্যা করে দমন করে নবিজি (সা) কিভাবে অন্যায় করলেন নাস্তিক সমকামীদের কাছে আমার প্রশ্ন? উগ্র সন্ত্রাসীদেরকে গণহত্যা করা কি অমানবিক কাজ নাস্তিকদের কাছে?
৫/ বনু কুরাইজা সন্ত্রাসীরা তারা তাদের নিকৃষ্ট অপরাধ স্বীকার করে নেয় এবং তাদের শাস্তি যে মৃত্যুদণ্ড সেটাও তারা মেনে নেয় তাহলে এখানে সমকামী নাস্তিকদের সমস্যা কেন ? অপরাধীরা যখন নিজের শাস্তি এবং অপরাধ মেনে নিয়েছে তখন আপনারা নাস্তিকরা কেন সেই সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের পক্ষে সাফাই গাইছেন?
৬/ যুদ্ধের নৈতিকতা কি হবে নাস্তিক্যধর্মে? নৈতিকতা কোন মহাপুরুষ নির্ধারণ করবে এবং কিভাবে? যুদ্ধে একজন নাস্তিক নেতার আদেশ বিশ্বাস করে মানা, অন্য নাস্তিকদের জন্য "মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে" হবে না কিভাবে? নাস্তিক নেতার বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না কেন ? যুদ্ধে যারা বন্দী হবে তাদেরকে কি করা হবে ? শুধু কি বন্দী করে রাখা হবে ? নারী শিশুদের কি করা হবে এবং কেন ? এদের সবাইকে যদি সারা জীবন বন্দী করে রাখা হয় তাহলে এরা তো রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে যাবে? যদি বন্দী করে সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে আবার এক সাথে হয়ে আবার যুদ্ধ করবে , তাহলে নাস্তিক্যধর্মে এই ভয়াবহ সমস্যার সমাধান কি? কিসের ভিত্তিতে সমাধান দেয়া হবে? সে সমাধান দিবে তাকে কিসের ভিত্তিতে সত্য বলে বিশ্বাস করা হবে?
৭/ সন্ত্রাসী বনু কুরাইজা লোকদের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে যদি নবী মুহাম্মদ (সা) অন্যায় করেন তাহলে এই দুনিয়ায় প্রত্যেক দেশে যুদ্ধের নিজস্ব আইন আছে সেগুলা কি নাস্তিকদের কাছে অমানবিক? ফ্রান্সে যুদ্ধের আইন নাই? জার্মানীতে যুদ্ধের আইন নাই?কানাডাতে যুদ্ধের আইন নাই? অস্ট্রেলিয়াতে যুদ্ধের আইন নাই? সুইজারল্যান্ডে যুদ্ধের আইন নাই? আমেরিকাতে যুদ্ধের আইন নাই? এসব আইন কি নাস্তিক্যধর্মে অন্ধবিশ্বাসী নাস্তিকদের কাছে বর্বর অমানবিক?নাস্তিকরা কবে কোথায় আন্দোলন করেছে এসব যুদ্ধের আইনের বিরুদ্ধে?
৮/ তৎকালীন পাকিস্তানী উগ্র বাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের দেশের সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধারা যেই যুদ্ধ করেছে সেটি কি নাস্তিক্যধর্মের নৈতিকতায় বৈধ? নাস্তিকরা দেশদ্রোহী হবে না কিভাবে?
৯/ দেশপ্রেম কি নাস্তিক্যধর্মের আলোকে ব্যাখ্যা করা যায় ? দেশপ্রেম কিন্তু ল্যাবে গবেষণা করে প্রমান করা যায় না তাহলে নাস্তিকরা কি এখন বলবে দেশপ্রেম বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে? দেশপ্রেমের কি আসলে অস্তিত্ব আছে নাকি এটি স্রেফ বিশ্বাস নাস্তিক্যধর্ম কি বলে? নাস্তিক্যধর্মে তো বিশ্বাস করা যায় না অর্থাৎ বিশ্বাস নাকি মহামারী তাহলে নাস্তিকরা কিভাবে দেশপ্রেমে বিশ্বাসী হবে?
১০/ নিজের দেশকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য একজন মানুষকে কি কি করতে হবে নাস্তিক্যধর্মের নৈতিকতায়? আর্মি অফিসারদের যেই কঠোর নিয়ম কানুন বিশ্বাস করতে হয় এবং সেসব মানতে হয় এসব নাস্তিক্যধর্মের আলোকে কতটা মানবিক? একটি আদর্শ দেশ গঠন করতে হলে কি কি নৈতিকতায় বিশ্বাস করতে হবে এবং কেন ? এসব জানতে হলে নাস্তিক্যধর্মের কোন বই আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে? যা সবাই বিশ্বাস করতে পারবে?
🕵আরও গভীরভাবে জানার জন্য সেযব রেফারেন্সের সাহায্য নিতে পারেনঃ
📶*কিতাবুস সিয়ার ।
📶*তাফসীরে ইবনে আব্বাস । সুরা আহযাব, ৬২ ও ৬৩ পৃষ্ঠা
📶*তাফসীরে জালালাইন । সুরা আহযাব ২৫ , ২৬ আয়াত এর তাফসীর পড়ুন ।
📶*আর রাহীকুল মাখতুম । আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী লিখিত, খাদিজা আখতার রেজায়ীর অনুবাদকৃত।
📶*তাফসীরে ইবনে কাসীর।ডঃ মুজিবুর রহমান অনুবাদকৃত।সুরা আহযাব ২৫,২৬ আয়াতের ব্যাখ্যা পড়ুন।
📶*তাফহীমুল কুরআন, সুরা আহযাব ২৫, ২৬ আয়াতের ব্যাখ্যা পড়ুন ।
📶*তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন, ৫ খণ্ড, ১১৯ পৃষ্ঠা পড়ুন ।
📶*তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন, ৩ খণ্ড, ৭৬ পৃষ্ঠা।
📶*আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ) লিখিত "সীরাতুল মুস্তফা (সা)" ২৭৮ পৃষ্ঠা থেকে পড়ুন ।
📶*আসাদুল্লাহ আল গালিব লিখিত "সীরাতুর রাসুল (সা)" ৪১৮ পৃষ্ঠায় যুদ্ধের কারন পড়ুন।
📶*সিরাতে ইবনে হিশাম থেকে বনু কুরাইজার অপরাধঃ https://ahlehaqmedia.com/6916/
📶*আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৪ খণ্ড ২২৩ – ২৪০ পৃষ্ঠা। লিখেছেনঃ আবুল ফদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ দামেশকী (রহ)
📶*তাফসীরে মাযহারী, কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী (রহ), ৯ খণ্ড,৪৪৮ পৃষ্ঠা।
📶*তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ, সুরা আহযাব ৩৩ঃ৯ আয়াতের ব্যাখ্যা বিস্তারিত।
📶*তাফসীরে আবু বকর জাকারিয়া, সুরা আহযাব ৩৩ঃ৯ আয়াতের ব্যাখ্যা বিস্তারিত।

Post a Comment

Previous Post Next Post