কিন্তু মীমের সাথে আমি যখন প্রথম কথা বলি তখনি আমরা দুজন একতম হই যে আমাদের পরিবার যতই জোড়াজুড়ি করুক আমরা নিজেদের সাধ্য মতো ইসলামি রীতি মেনে চলবো। একে অপরকে এবিষয়ে সহযোগিতা করবো। আসলে সাধারণ পরিবারে বেড়ে মানুষদের জন্য পরিবারের সাকলের বিরুদ্ধে গিয়ে দ্বিন পালন করা সত্যি অনেক কঠিন, এটা বলে বুঝানোর মতো না।
আমাদের সমাজে বিয়ে মানেই বউ কয়েকশো মানুষের সামনে সেজেগুজে বসে থাকবে। আর সকলে এসে নতুন বউয়ের রুপ সৌন্দর্য দেখবে।
মীম যখন আমাকে বললো আমি বিয়েতেও নিকাব এবং বোরখা পরবো তখনই আমি সিদ্ধান্ত নেই তাকে বিয়ে করার। এজন্য আমাদের বিয়ে-বউভাত অনুষ্ঠানে মীমের জন্য কোন দামী শাড়ী কেনা হয়নি, সবচেয়ে দামী ব্রান্ডের দুটা বোরখা কিনা হয়েছে। ও যদিও আরও সিম্পল পরতে চেয়েছিলো কিন্তু আম্মু বললো না বউকে ভালো বোরখা পরতে হবে।
আমার বাসার মানুষ আগে থেকেই জানতো যে আমি বিয়েতে বউকে বোরখা পরাবো। তারা এটাও জানে এবিষয়ে জোড়াজুড়ি করলে আমি বিয়েই ক্যান্সেল করে দিবো। সেজন্য বাসার মানুষ কোন বাধা দেয়নি।
তবে এক-দুজন আত্মীয় আমাকে বলেছে আমাদের গ্রাম এবং বংশের মধ্যে আমাদের বিয়েটা হচ্ছে তাদের দৃষ্টিতে এবনরমাল বিয়ে।
কিন্তু সমস্যা বাধে বিয়ের দিন আমার কাছের কিছু আত্মীয় মীমকে বলে কালকে বউভাতে যেহেতু মহিলা-পুরুষ আলাদা তাহলে তুমি হিজাব পরবে, মুখ খোলা রাখবে।
মীম আমাকে বিষয়টি জানায় যে ও কি করবে, তাদের কথা অমান্য কিভাবে করবে। কিন্তু ও কিছুতেই এমনটা করতে চায় না। আমি ওকে বলি কেউ এসে যদি তোমাকে নেকাব খুলতে বলে তাহলে তুমি বলবে ইরফান না করে দিয়েছে, যাতে নেকাব না খুলি। এটা শুনে মীমতো মহা খুশি।
কিন্তু সমস্যা হলো, আমার কিছু আত্মীয় আমাকে জিজ্ঞেস করা শুরু করলো তুমি বউকে জোড় করে বোরখা পরাচ্ছ না? নতুন বউকে জোড় করে ইসলামিস্ট বানাচ্ছে। আমি যখন বললাম না এটা আমাদের দুজনের সম্মতিতে হয়েছে তখন তারা বলে কি দরকার ছিল একদিন ইতো।
একদিন দুদিন হীজাব পরে থাকলে কিছু হবে না।আমি অবাক হয়েছি যখন মীমের থেকে শুনলাম বউভাতের দিন কয়েকজন মহিলা আত্মীয় স্টেজে ওর নেকাব খুলার জন্য হীজাব নিয়ে টানাটানি করে। এক-দুজন সরাসরি আসে নেকাব খুলতে। পরে ও অনেক বারন করে তাদের থামায়।
শুনে এতো রাগ উঠে যে কি বলবো, এটা কোন ধরনের ভদ্রতা একজন নারীর নেকাব খুলতে তারা জোড়াজুড়ি করে। নারী হয়ে কিভাবে অন্য নারীকে এভাবে সবার সামনে পন্যের মতো উপস্থাপন করতে উদ্যত হয়।
পরে ভাবলাম তাদের দোষ না, তারা সমাজ থেকে এটাই শিখেছে, তারা কখনো ইসলামি রীতির বিয়ে দেখেনি তাই তাদের জন্য এটা সত্যি এবনারমাল বিয়ে মনে হয়েছে। ছবিটা এজন্য শেয়ার করলাম যাতে মানুষের মনে এটাও থাকে যে হ্যা বিয়েতে বউ নেকাব পরাও থাকতে পারে এই মানসিকতা তৈরি হয়। যাতে অন্যদের জন্য এমনটা করা সহজ হয়।তারাও যেনো ইন্সপায়ার হয়।
যারা সাধারণ পরিবার থেকে দ্বীন পালনে চেষ্টা করে তারা চাইলেই আল্লাহর রহমতে সবাইকে মানিয়ে ইসলামি রীতি মেনে বিয়ে করতে পারেন। এটার জন্য চাই আপনার এবং আপনার জিবীন সঙ্গীনির আপ্রান চেষ্টা ও ইচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ আমার পেরেছিলাম।
হয়তো এটাই আমাদের যুগলবন্দী শেষ ছবি, এরপ
র হয়তো কোন ছবি পোস্ট করা হবে না। এটাই করতাম না শুধু কিছু মানুষ যাতে ভাবতে শুরু করে যে এরকম ভাবেও বিয়ে হয়।
আমি জানি এবং একবার দেখেছি কয়েকজন হুজুরের ছেলের বিয়েতে বউ এবং কোন মেয়ে মানুষকে দেখা যায় না।তবে আমাদের পরিবারকে সেটা মানানোর সাধ্য আমাদের ছিলো না। তাই মীমকে নেকাব পরেই সবার সামনে আসতে হয়েছে।
আমাদের জন্য দুআ চাই,এবং যেসকল ভাইবোন দ্বিনকে মনে বিয়ে করতে চায় আল্লাহ তাদের সহায় হোক সেই দুআ করি।
# আমাদের বিয়েতে কোন গায়ে হলুদ হয়নি।
# মীম বোরখা + নেকাব নিজের এবং আমার ইচ্ছেতেই পরেছে।
# মীমকে বিয়ের আগে আমার বাবাও দেখতে পারেনি।
# বউভাত অনুষ্ঠানে মহিলা-পুরুষদের বসার জন্য আলাদা ফ্লোর ছিলো।
# আলাদ ভাবে কোন ফোটোগ্রাফার ছিলো না। এই ছবিটা আমাকে অন্য একজন দিয়েছে।
# বউভাত অনুষ্ঠানে মহিলা-পুরুষ আলাদা হবার পরেও নেকাব খুলা হয়নি কারন ওখানে যেই মহিলারা ছিলো তারা মুখ খোলা ছবি ফেসবুকে পোস্ট করবে। সেজন্য নেকাব পরা ছিলো, যার ইচ্ছে ছবি তোলো কোন সমস্যা নেই।
#এটাও যে ১০০% ইসলামি বিয়ে তা কিন্তু না, এটা শুধুই মন্দের ভালো মনে করবেন। আপনারা পুরোপুরি আলাদা করার চেষ্টা করবেন #ইনশাআল্লাহ
-মোহাম্মদ ইরফান