সংশয়বাদ নিয়ে আমার সংশয়।

 


🎙বিষয়ঃ সংশয়বাদ নিয়ে আমার সংশয়। 

✍ লিখেছেনঃ এম ডি আলী। 


ভূমিকাঃ যুক্তিবাদী মুসলিমদের কাছে নাস্তানাবুদ হয়ে বর্তমানে অনেক নাস্তিক নিজেকে সংশয়বাদী বলে দাবি করে,যেন তারা মুসলিমদের যৌক্তিক প্রশ্ন থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে এবং নাস্তিক পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করেন। এটা নাস্তিক মহলের একটা দুর্বলতা। নাস্তিকতা যে একটা ভুয়া দুর্বল সিস্টেম এটা নাস্তিকরা হারে হারে টের পাচ্ছে, যদিও এসব কথা তারা স্বীকার করতে চায় না। একজন নাস্তিক তার নাস্তিক্যবাদ ছেড়ে যখন সংশয়ের আশ্রয় নেয় তখন এটা প্রশংসনীয় হলেও এ সংশয়বাদে রয়েছে কিছু ঘাপলা। যা আজকে আমি আপনার কাছে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করব। 

🤔 সংশয়বাদ কাকে বলে?

সংশয়বাদ শব্দটা বিশ্বাসপ্রবণতার ঠিক বিপরীত। যদি আপনি প্রমাণ ছাড়া কোনো কিছু বিশ্বাস না করে অর্থাৎ বিশ্বাসপ্রবণ না হয়ে প্রতিটি বিষয়ের প্রমাণ খোঁজেন, তখনই আপনি সংশয়বাদী এর অর্থ কিন্তু দ্বিধায় ভোগা নয়। অথবা যেকোন কিছুকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মনোভাবকেই সংশয়বাদ বলা যেতে পারে। সাধারণ্যে বহুল প্রচলিত কোনো ধারণাকে সন্দেহ করা অর্থে সংশয়বাদ শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কোনো কিছুর নিদর্শন পেলে তাকে বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে না নিয়ে বরং সেই নিদর্শনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই সংশয়বাদ। যারা সংশয়বাদের প্রতি আস্থা রাখেন বা সংশয়বাদ চর্চা করেন তাদেরকে সংশয়বাদী বলা হয়।

চিরায়ত দর্শন থেকেই সংশয়বাদের ইংরেজি প্রতিশব্দ, স্কেপ্টিসিজম শব্দটি এসেছে। প্রাচীন গ্রিসে কিছু দার্শনিক ছিলেন যারা "কোনো কিছুকেই নিশ্চিত বলে ঘোষণা দিতেন না বরং সব কিছুতেই তাদের নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতেন"। দার্শনিকদের এই ধারাটিকে তখন Skeptikoi বলা হতো। তাই Skeptikoi দার্শনিক ধারার দার্শনিকদের বৈশিষ্ট্যকেই স্কেপ্টিসিজম হিসেবে আখ্যায়িত করা হতে থাকে।

👉 সুত্রঃ উইকিপিডিয়াতে বিস্তারিত দেখুন। 

🌎 উপরের তথ্যের অনুপাতে সংশয়বাদ বলতে আমরা জানতে পারলামঃ

১/ সংশয়বাদ বিশ্বাসের বিপরীত। 

২/ সব বিষয়েই প্রমান সন্ধান করা। এর অর্থ দ্বিধায় ভোগা নয়। 

৩/ কোনো কিছুকেই না মেনে প্রশ্ন করার মনোভাব।

🆓 মুক্তমনা যৌক্তিক চিন্তাঃ

সংশয়বাদ বিশ্বাসের বিপরীত, এই কথা কিভাবে বিশ্বাসযোগ্য? বিশ্বাস এর বিপরীত, প্রমাণ সন্ধান করা, কোনো কিছুকেই না মেনে প্রশ্ন করার মনোভাব করা ইত্যাদি যা যা বলা হলো সব কিছু কি বিশ্বাসযোগ্য? যদি জবাব হয় Yes তাহলে আমাদেরকেও বিশ্বাস করতে হচ্ছে। যদি জবাব হয় No তাহলে যা বিশ্বাসযোগ্য নয় তা সত্যি  কিভাবে হয়? সংশয়বাদের আলোকে এই সমস্যার সমাধানে কি হবে? কারা এ সমস্যার সমাধান দিবেন? তাদের দেয়া সমাধান সর্বজনীন কিসের ভিত্তিতে? 

উপরে বর্ণিত যে সংজ্ঞা বলা হয়েছে তা থেকে একটা যৌক্তিক সংজ্ঞা ধারায় সেটা হচ্ছে সংশয়বাদ মানে যে কিছুই জানে না। সেটা কিভাবে? একজন মানুষ কখন প্রশ্ন করে? যখন সে কিছুই জানে না। যেমন আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনার নাম কি? আমি জানি না আপনার নাম কি এই কারনেই কিন্তু জিজ্ঞাসা করলাম। কিন্তু আপনার নাম কি? আপনি বললেন রিচার্ড ডকিন্স। কিন্তু এই নাম আপনি তখনই মানতে পারবেন যখন আপনি বিশ্বাস করবেন যে লোকটি সত্য বলছে কিন্তু সংশয়বাদ যদি বিশ্বাসের বিপরীত হয় তাহলে একটা মানুষের নামও জানা পসিবল না। এ কারনেই বললাম সংশয়বাদের যৌক্তিক সংজ্ঞা করতে হবে এটা যে কিছুই জানে না বা কোনো কিছুকেই না জানা। 

সংশয়বাদ শব্দটি নিজে কি সার্বজনীন সংশয় থেকে মুক্ত? সংশয়বাদ নিজে কি নিশ্চিত? সংশয়বাদ যদি দ্বিধা Confusion না হয়ে থাকে তাহলে এটা যে Confusion না সেটা কোন নিশ্চিত জ্ঞানের মাধ্যমে জানা পসিবল হলো? আচ্ছা ধরে নিলাম সংশয়বাদ সত্য অনুসন্ধানের একটা রাস্তা। কিন্তু প্রশ্ন হলো সত্য অনুসন্ধানটা কি দিয়ে করবো এবং কিভাবে? নিজের বিবেক? সবার বিবেক তো এক না? তাহলে সমাধান? 

✅ সংশয়বাদ সত্যি হলে নাস্তিক্যবাদ ভুলঃ

নাস্তিকতা মানে হলো স্রস্টাকে প্রমানের অভাবে অস্বীকার করা অর্থাৎ স্রস্টা নেই এটা নিশ্চিত নাস্তিকরা। কিন্তু সংশয়বাদ বলছে কোনো কিছুই নিশ্চিত না কারন স্কেপ্টিসিজম দার্শনিকরা কোনো কিছুকেই নিশ্চিত ঘোষণা দিতেন না। এই সুত্রে বিবর্তনবাদও  নিশ্চিত সত্য কোন বিষয় নয়। 

✅ বিবর্তনবাদ সঠিক হলে সংশয়বাদ ভুলঃ

এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে বিভিন্ন ধাপে ধাপে আজকের এ মানুষ জাতি। মানুষ জাতি অন্য প্রানীদের মতোই প্রানী চতুস্পদ। অন্য প্রানীদের যেমন বিবেকবোধ নেই ঠিক মানুষের মাঝেও নির্দিষ্ট বিবেকবোধ নেই। তাই তো নাস্তিকরা একটা দাবি করে আমাদের ধর্মের প্রয়োজন নেই। যে যার মতো চলবে। এটা আসলে বিবর্তনবাদেরই একটা ধারনা। সংশয়বাদ যে বলে প্রশ্ন করার মনোভাব থাকতে হবে, বিশ্বাসের বিপরীত থাকতে হবে, প্রমান খুঝতে হবে। আচ্ছা মানুষ ছাড়া প্রানী জগতের কে এই কাজ গুলো করে আমাকে বলেন তো? বাঘ, হরিণ, সিংহ ইত্যাদি যতো জানোয়ার আছে এরা কি সংশয়বাদের এসব নিয়ম মানে? উত্তর হচ্ছে না তাহলে নাস্তিক কিভাবে সংশয়বাদী হয় বিবর্তনবাদের আলোকে? বিবর্তনবাদ মানুষকে বুদ্ধি দিয়েছে কিভাবে আর অন্য প্রানীদেরক কেন দেয় নাই? অন্য প্রানীদের মাঝে কি সংশয়বাদ মনোভাব আছে? একটা বাঘ হরিণকে হত্যা করে খেয়ে কি নৈতিক কাজ করলো? বাঘ কি কখনো ভেবেছে হরিণকে মেরে খাওয়া অপরাধ? এটার জন্য সে প্রশ্ন করেছে? সত্য অনুসন্ধান করেছে? না। তাহলে নাস্তিকরা নিজেদেরকে সংশয়বাদী দাবি করে কি বিবর্তনবাদকে ভুল প্রমান করছে না? বিবর্তনবাদ অনুপাতে দুনিয়ার সবাই প্রানী।

👉 সংশয়বাদের কন্ট্রাডিকশন বুঝতে উদাহরণ গুলো পড়ুন,বুঝার চেষ্টা করুনঃ


* সত্য বলে কিছু নেই।

> এই বিবৃতিটা কি সত্য?

‌‌

* কারো পক্ষে সত্য জানা সম্ভব নয়।

> এই বিবৃতিটি কি করে জানা সম্ভব হলো?


* আপনি কখনোই সত্য জানতে পারবেন না।

> আপনি কি এ কথার সত্যতা জানেন?


* এটা আপনার জন্যে সত্য, আমার জন্যে না।

> আপনার এই বিবৃতিটা কি সবার জন্যে সত্য?


* সকল সত্য আপেক্ষিক।

> এই সত্যটা কি আপেক্ষিক?


* কারও কাছে সত্য বলে কিছু নেই।

> আপনি তাহলে কি বলছেন? তাহলে আপনার কাছে এই সত্য কিভাবে এবং কোথা থেকে এলো?


* আপনাদের নৈতিকতা কখনোই আরেকজনের ওপর চাপিয়ে দেয়া উচিত নয়।

>এই নৈতিকতাটা আমার ওপর বা অপরের ওপর চাপিয়ে দেয়া কি উচিত?


* বিশ্বাসের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

> এই বিশ্বাসটির যৌক্তিকতা কতটুকু?


*মুক্তমনের অধিকারীরা প্রমাণ ছাড়া কিছু বিশ্বাস করেনা

>আপনি কি এই বিবৃতি প্রমাণসহ বিশ্বাস করেছেন?


*এই মহাবিশ্বের সবকিছু অর্থহীন।

> এই বিবৃতির দ্বারা কি বুঝালেন?এই বিবৃতির অর্থ কি?


*আপনার কাউকে জাজ করা উচিত নয়।

>এটা কি জাজমেন্ট না?


* সবকিছুকে সন্দেহ করা উচিত। সন্দেহ দিয়ে সবকিছু শুরু করা উচিত।

> আমার কি এই বিবৃতিকে সন্দেহ করা উচিত? এই বিবৃতিটাকে কি তাহলে সন্দেহ করতে শুরু করা উচিত না?


* অন্যের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আপনার সহনশীল হওয়া উচিত।

‌> আপনি কি আমার দৃষ্টিভঙ্গীর ওপর সহনশীলতা প্রদর্শন করছেন? আমার দৃষ্টিভঙ্গী তাহলে আপনার সহ্য হচ্ছেনা কেন?


‌* আপনার নিজেকে নিয়ে আগে চিন্তা করা উচিত।

>তাহলে তো আমার এই বিবৃতিটি শোনা উচিত না, তাইনা?


*আপনার বিশ্বাস আপনার কাছে রাখুন। একজনের বিশ্বাস আরেকজনের ওপর চাপানো উচিত না।

>তাহলে এই বিশ্বাসটি আমার ওপর চাপাচ্ছেন কেন?


* ধর্মে কোনো সত্য নেই। যা আছে কেবল বিজ্ঞানে।

>এটা কি বৈজ্ঞানিক সত্য? এই উক্তিটির কোনো পরীক্ষামূলক প্রমাণ নেই।


* বিজ্ঞান একসময় সব জেনে যাবে।

> বৈজ্ঞানিকভাবে জানলেন? সব জেনে যাওয়ার হিসেব কি বিজ্ঞান দিয়ে দিয়েছে?


* ইতিহাস সঠিকভাবে জানা সম্ভব না।

> এই বিবৃতিটা কি একটু আগে ইতিহাস হয়ে গেল না?


*পঞ্চইন্দ্রিয়ের দ্বারা যা লাভ করা যায় না, তার অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ নেই।

> আপনার এই উক্তিটির ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কোনো অস্তিত্ব আছে কি? লিখিত বা শ্রবণকৃত উক্তি কন্ঠস্বর বা কলমের কালির প্যাটার্নের অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়। উক্তিটির অস্তিত্বের নয়। আপনি যে চিন্তাজগত থেকে বিবৃতিটি দিলেন, তার অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে পারবেন?


*দর্শন, অধিবিদ্যা, আধ্যাত্মিকতা ভুয়া জিনিস। অবৈজ্ঞানিক এবং অপ্রমাণিত। কেবল বিজ্ঞানই বিশুদ্ধ।

> বিজ্ঞান নিজে কি বৈজ্ঞানিক? বিজ্ঞানকে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করুন তো?


পরিশেষে যুক্তিবাদী মানুষের কাছে আমার মানবিক আবদার। আপনি নাস্তিকিও বিশ্বাস এর বদলে যুক্তি-প্রমাণ নির্ভর হয়ে উঠুন, পড়ুন, জানুন এরপরে সঠিক সিদ্ধান্তের উপর বিশ্বাস করুন কারণ "জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, যুক্তি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব"।

Post a Comment

Previous Post Next Post